ঢাকা | নভেম্বর ২৩, ২০২৪ - ২:২৪ অপরাহ্ন

হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে নিহত

  • আপডেট: Friday, October 18, 2024 - 5:00 am

জাগো জনতা অনলাইন।। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের নতুন প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল।

মি. সিনওয়ার ২০১৭ সাল থেকে গাজায় হামাসের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতে, সাত অক্টোবরের হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ তথা মূল পরিকল্পনাকারী তিনিই ছিলনে। ওই হামলায় হামাসের বন্দুকধারীরা প্রায় এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করেছিলো এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে এসেছিলো।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস প্রধানের হত্যা মানে যুদ্ধের সমাপ্তি নয়। তিনি এটিকে গাজায় বছরব্যাপী যুদ্ধ “শেষের সূচনা” বলেছেন।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে যে বুধবার গাজার রাফাহ শহরের একটি ভবনে অভিযান চালানো হয়েছিলো। ধারণা করা হয়েছিলো যে ওই ভবনটি হামাসের সিনিয়র নেতারা ব্যবহার করেন। সেই অভিযানে তিনজন নিহত হন, মি. সিনওয়ার তাদের মাঝে একজন।

 

বাহিনী আরও জানায় যে ওই স্থানে জিম্মির কোনও চিহ্ন নেই। পূর্বে দাবি করা হয়েছিলো যে জিম্মিদের সুরক্ষার স্বার্থে মি. সিনওয়ার ভ্রমণের সময় তাদেরকে নিজের সাথে রাখবে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, তিনজন বন্দুকধারীকে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে দৌড়াতে দেখেছে ইসরায়েলি সেনারা। একবার গুলি চালানো হলে তারা বিচ্ছিনি হয়ে যান ও ইয়াহিয়া সিনওয়ার একা ভবনে প্রবেশ করে।

মি. হাগারি আরও বলেন যে ড্রোন দিয়ে দেখা গেছে, মি. সিনওয়ার একটি চেয়ারে বসে আছেন। ইসরায়েলি সেনারা ভবনে প্রবেশ করে নিহত এই হামাস প্রধানকে একটি ভেস্ট, বন্ধুক ও ৪০ হাজার শেকেলসহ (আট হাজার ২০০ পাউন্ড) দেখতে পায়।

আইডিএফ প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল হার্টজি হালেভি বলেছেন, “আমরা বলেছিলাম আমরা তাকে ধরবো এবং তাকে ধরেছিও। তাকে ছাড়া পৃথিবী এখন ভালো।”

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করতে কয়েক ঘণ্টা দেরি হয়েছিলো কারণ ইসরায়েল ইয়াহিয়া সিনওয়ারের দাঁতের রেকর্ড ও আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে দেখছিলো। ইসরায়েলের কাছে সিনওয়ারের জেনেটিক ডেটা সংরক্ষিত আছে। কারণ তিনি তার জীবনের কয়েক দশকই কাটিয়েছেন ইসরায়েলের কারাগারে।

এর আগে একবার অনলাইনে কিছু গ্রাফিক চিত্র ছড়িয়ে পড়েছিলো। সেখানে দেখা গেছে, সিনওয়ারের মতো দেখতে একটি মৃতদেহ মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে।

আইডীএফ সেসময় বলেছিলো, তাকে হত্যা করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনুসরণ করা একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত না হয়ে বলতে চায়নি।

নেতানিয়াহু সিনিওয়ার হত্যাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “যদিও এটি গাজার যুদ্ধের শেষ নয়, এটা শেষের শুরু।”

তিনি বলেন, এই যুদ্ধ “আগামীকাল-ই” শেষ হতে পারে, যদি হামাস অস্ত্র ফিরিয়ে দেয় এবং গাজায় আটক বাকি জিম্মিদেরকে ফিরিয়ে দেয়।

কীভাবে ‘ভালো তালেবান’ হিসেবে পরিচিতি পেল গুল বাহাদুর
ছবির ক্যাপশান,অস্ত্র হাতে ইয়াহিয়া সিনওয়ার
এর আগে জিম্মিদের পরিবারকে উদ্দেশ্য করে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, “যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার প্রিয়জনকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে পারছি, ইসরায়েল সমস্ত শক্তি দিয়ে লড়বে। কারণ তারা আমাদেরও প্রিয়জন।”

এর আগে, জিম্মিদের পরিবারকে সম্বোধন করে নেতানিয়াহু বলেছিলেন যে ইসরায়েল “যতক্ষণ না আমরা আপনার প্রিয়জনকে বাড়িতে না আনছি ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে চলবে, কারণ তারাও আমাদের প্রিয়জন”।

মি. নেতানিয়াহু গাজাবাসীকে বলেন, “সিনওয়ার আপনার জীবন ধ্বংস করেছে।”

“হামাস আর গাজা নিয়ন্ত্রণ করবে না…এটি হামাসের পরবর্তী দিনের শুরু, এবং গাজার বাসিন্দারা, অবশেষে হামাসের অত্যাচার থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করার জন্য এটি আপনাদের জন্য একটি সুযোগ,” তিনি বলেন।

ইয়াহিয়া সিনওয়ারের এই হত্যাকাণ্ডের আগে গত জুলাই মাস্যা তেহরানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়াহ নিহত হয়েছিলেন।

পরবর্তীতে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হামাসপ্রধান করে হানিয়াহ’র ভূমিকায় বসানো হয়।

 

৬১ বছর বয়সী সিনওয়ার মূলত আবু ইব্রাহিম নামে পরিচিত। তিনি গাজা উপত্যকার দক্ষিণ প্রান্তে খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

সিনওয়ার তার যৌবনের একটি বড় অংশ – ২২ বছরেরও বেশি সময় – অর্থাৎ ১৯৮৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইসরায়েলি কারাগারে কাটিয়েছেন।

কারাগারে থাকার এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আবার কিছু সময় সম্পূর্ণ নির্জন কারাবাস ছিল, যা তাকে আরও উগ্রপন্থী করে তোলে বলে মনে করা হয়।