ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ - ২:৪০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

আশানুরূপ মূল্য না পাওয়ায় হতাশ মিরসরাইয়ের টমেটো চাষিরা 

  • আপডেট: Tuesday, March 5, 2024 - 9:59 am

মিরসরাই প্রতিনিধি : এ. এইচ. সেলিম।। 

চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ড উপজেলায় টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে হতাশ চাষিরা। গত কয়েকদিন দুই উপজেলার
বাজারগুলোতে ১০-১২ টাকা কেজি দরে টমেটো বিক্রি করতে দেখা গেছে চাষিদের। তবে সেটারও পর্যাপ্ত ক্রেতা মিলছে না। এ অবস্থায় খরচ ওঠানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে চাষিদের জন্য। অথচ একই টমেটো খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়।
জানা গেছে, সীতাকুন্ড উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে সলিমপুর পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ১৬ হাজার চাষি টমেটো চাষ করেন। প্রতি মৌসুমে নভেম্বরে চারা রোপণ করে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে এবার ক্ষেতের টমেটো বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কারণ বাজারে ন্যায্য দাম মিলছে না।
চাষিরা জানান, ক্ষেতে এখনো প্রচুর টমেটো রয়েছে। কিন্তু বাজারে এনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে এমন দামে বিক্রি হচ্ছে যে ক্ষেত থেকে বাজারে আনার খরচও উঠছে না।
সীতাকুন্ড পৌর সদরের মোহন্তহাটে চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে সেখানে মৌসুমের সর্বনিম্ন মূল্যে বিক্রি হচ্ছে টমেটো।
উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতরের বাসিন্দা ইলিয়াছ হোসেন জানান, তিনি দুই ঝাঁকায় প্রায় ৯০ কেজি টমেটো বিক্রি করতে আনেন। কিন্তু বাজারে টমেটোর ক্রেতা কম। ফলে দুই ঝাঁকা টমেটো মাত্র দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। সে হিসাবে প্রতি কেজি টমেটোর দাম পড়েছে ১০ টাকা। অথচ একজন শ্রমিক দিয়ে তিনি টমেটো তুলেছিলেন যার মজুরি ৬শ টাকা। সৈয়দপুর থেকে টমেটো আনতে খরচ হয়েছে ১০০ টাকা। এছাড়া বাজারের হাসিল, নাশতা প্রভৃতি মিলিয়ে আরও ৭০-৮০ টাকা খরচ হয়েছে। এক কথায় টমেটো বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, আমরা এমনই অসহায় যে বাজারে ন্যায্য মূল্য না পেলে টমেটো ফেরত নিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। তাহলে সবটাই পচে যাবে। সীতাকুন্ডে টমেটো সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন বিপাকে পড়তে হয়েছে। অথচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কম দামের সময় টমেটো হিমাগারে রেখে দাম বাড়লে তা বাজারে বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হতে পারতেন। আমার মতো হাজারো টমেটো চাষি প্রতিবছর এই দূরাবস্থায় পড়ছেন।
মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল করিম খানসাব বলেন, আমরা মৌসুমভেদে সব ধরনের সবজি চাষ করে থাকি। জানুয়ারিতে টমেটোর চারা লাগিয়েছি ৭০ শতক জমিতে। এই জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ৩৬ হাজার টাকার মতো। কিন্তু দাম পাচ্ছি না। প্রথম দিকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও হঠাৎই দাম একদম পড়ে গেছে। আজ ১০-১২ টাকায় টমেটো বিক্রি হয়েছে। অনেকেই ৬-৭ টাকা কেজিতে টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।
চাষি ইলিয়াস আলী ও নুরুল করিম খানসাব দুই উপজেলায় টমেটো সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপনের দাবি জানান। তারা বলেন, একটি হিমাগার থাকলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হতে পারতো, অন্যদিকে সারাবছর টমেটো পাওয়া যেতো বাজারে। এখনো এপ্রিল মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি হবে। বাজার এ রকমই থাকলে কৃষকরা লাভের বদলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
অপরদিকে মিরসরাই পৌরসদর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিকেজি টমেটো খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। আকারে বড়গুলো ৩০ টাকা ও ছোটগুলো ২৫ টাকায় বিক্রি করছের ব্যবসায়িরা।
কৃষকদের এ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, এখানে কৃষকদের জন্য একটি হিমাগার স্থাপন খুবই জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে এলাকার হাজারো কৃষক উপকৃত হবেন।