খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় শরতের কাশবন যেন প্রকৃতির আঁকা জীবন্ত ক্যানভাস

আরিফুল ইসলাম মহিন, খাগড়াছড়ি।। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের রথীচন্দ্র কার্বারী পাড়ায় গিয়ে চোখে পড়ে এক অপার্থিব দৃশ্য। পাহাড়ি জনপদের বুকে বাতাসে দুলতে থাকা কাশফুল যেন শরতের আগমনী বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। শুভ্রতায় মোড়া এই কাশবন প্রতিদিনই টেনে নিচ্ছে অসংখ্য দর্শনার্থীকে।
বর্ষা বিদায় নিয়েছে, শরতের আবির্ভাব প্রকৃতিকে দিয়েছে নতুন এক সাজ। বাংলার কবিদের কাব্যে যে শরৎ ধরা দেয় শুভ্র কাশফুলে, দীঘিনালার পাহাড়জুড়ে আজ যেন তারই বাস্তব প্রতিচ্ছবি। পাহাড়ি ঝর্ণার তীর, ছোট-বড় টিলা আর ফাঁকা জমিনে সারি সারি কাশফুলের শোভা মন কাড়ছে পথচারী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের। সকাল-বিকেল বাতাসে দোল খাওয়া কাশফুল এনে দিচ্ছে অন্যরকম আবহ।
শরতের রূপ কবিদের কলমে যেমন ফুটে উঠেছে, তেমনি দীঘিনালার কাশবনেও যেন তার প্রতিচ্ছবি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন “শরৎ, তোমার শিশির-ধোয়া কুন্তলে বনের পথে লুটিয়ে পড়া অঞ্চলে।” দীঘিনালার কাশবনের শুভ্র ফুলগুলো ঠিক তেমনই আলোকোজ্জ্বল ও মোহনীয়।
কাজী নজরুল ইসলাম শিউলির সুবাসিত রাতের কথা লিখেছিলেন, আর জীবনানন্দ দাশ কাশফুলের ভেলায় খুঁজে পেয়েছিলেন প্রকৃতির শান্ত সৌন্দর্য। দীঘিনালার কাশবনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, এই কবিতাগুলো এখানেই জন্ম নিয়েছিল।
কাশবন দেখতে আসা দর্শনার্থী আল আমিন জানান, “কাশবন, আকাশ আর পাহাড় মিলে এমন এক দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এখানে এসে মনে হয় মনটা ভরে যায় প্রশান্তিতে।”
আরেক দর্শনার্থী জ্যাক ত্রিপুরা বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে এই কাশবনের ভেতর দিয়ে হাঁটার অনুভূতি একেবারেই আলাদা। পাহাড় আর নীল আকাশের সঙ্গে কাশফুল মিলেমিশে অপার্থিব সৌন্দর্য তৈরি করেছে।”
স্থানীয়রা বলছেন, শরতের আগমনী বার্তা জানান দেয় এই কাশফুলই। এ ফুলের আবির্ভাব মানেই শীতের আভাস, উৎসবের আমেজ আর প্রকৃতির এক চিরন্তন সৌন্দর্য।
প্রকৃতিপ্রেমীরা মনে করেন, কাশফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক নয়, জীববৈচিত্র্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড়ি অঞ্চলে কাশবনের বিস্তৃতি প্রমাণ করে প্রকৃতির স্বাভাবিকতা এখনও বহাল আছে। দর্শনার্থীদের অনেকে বলছেন, যদি এসব কাশবন পর্যটনবান্ধবভাবে সাজানো যায়, তবে দীঘিনালা হয়ে উঠতে পারে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অনন্য এক গন্তব্য।
শরৎ শুধু ঋতুর পরিবর্তন নয়, এটি বাংলার প্রকৃতির চিরন্তন রূপলাবণ্য। দীঘিনালার কাশবন সেই সৌন্দর্যের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। এখানে এসে মনে হয়, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে এঁকেছে এক শুভ্র কাব্য—যেখানে প্রতিটি কাশফুল কবিতার শব্দ, প্রতিটি শিউলি প্রেমের আহ্বান আর প্রতিটি মেঘ আকাশের পাতায় আঁকা তুলির আঁচড়।