ঢাকা | জুন ২৮, ২০২৫ - ৯:৪১ অপরাহ্ন

শিরোনাম

রিকশাচালকদের জন্য প্রশিক্ষক তৈরিতে ব্যয় ৫৪ লাখ টাকা

  • আপডেট: Saturday, June 28, 2025 - 6:26 am

জাগো জনতা অনলাইন।। রাজধানী ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচলকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে নতুন এক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগ নকশা করেছে পরিবেশবান্ধব ব্যাটারিচালিত রিকশা। এই রিকশা চালাতে হলে চালকদের প্রশিক্ষণ নিতে হবে ও লাইসেন্স পেতে হবে।

চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে ৩০০ প্রশিক্ষক, যাদের প্রথম ধাপে ২০০ জনকে তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন—শনিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের রোড সেফটি প্রোগ্রাম।

এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ৫৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা ব্যয় হচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পক্ষ থেকে। প্রশিক্ষণ দেবেন ব্র্যাকের ২৩ জন অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৩০০ জন প্রশিক্ষকের মধ্যে ২০০ জনের তালিকা দিয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। তাঁদের মধ্যে ১৭৫ জন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থী, যাঁরা আগে থেকেই ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বাকি ১০০ জন হলেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্য।

ব্র্যাক সূত্রে জানা গেছে, তিন দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষকদের শেখানো হবে—কীভাবে একজন রিকশাচালককে নিরাপদ চালনার কৌশল, গতির নিয়ন্ত্রণ, বাঁক নেওয়া, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, ও নিজ এবং যাত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করা যায়।

প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে মূল উপস্থাপনাগুলো শেখানো হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে প্রশিক্ষকের মতো করে শেখানোর অনুশীলন করানো হবে। শেষ দিনে থাকবে রিকশার কারিগরি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, যেন প্রশিক্ষকেরা চালকদের তা বোঝাতে সক্ষম হন।

প্রতিদিন এক হাজার টাকা হারে ভাতা পাবেন প্রশিক্ষকেরা। খাবার ও নাশতার ব্যবস্থা থাকবে। কর কেটে তিন দিনে তাঁরা মোট আড়াই হাজার টাকা পাবেন। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেককে দেওয়া হবে একটি করে ওয়েবক্যামসহ ল্যাপটপ, যা ব্যবহার করে তারা পরবর্তী সময়ে চালকদের প্রশিক্ষণ দেবেন এবং তাদের তথ্য সংগ্রহ করবেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে একটি খসড়া নীতিমালা, যেখানে রিকশার সর্বোচ্চ গতি ধরা হয়েছে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। কিছু সড়কে এই গতি আরও সীমিত করা হবে (১৫–২০ কিমি/ঘণ্টা)। তবে যেহেতু রিকশাগুলো অলিগলি ও পাড়ায় চলবে, তাই সরাসরি নজরদারি কঠিন হবে। এ জন্য চালকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

প্রথম ধাপের প্রশিক্ষণ চলবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ১০টি অঞ্চলে, প্রতি দলে ২০ জন করে। উত্তর সিটির গুলশান, উত্তরা, মহাখালী ও মিরপুর এলাকার ডিএনসিসি কার্যালয়গুলোতে এসব প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।

মন্ত্রণালয় থেকে মাস্টার ট্রেইনারদের জন্য ১০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা কেনার জন্যও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)–এর সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, তরুণদের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে যুক্ত করার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে তিন দিনের প্রশিক্ষণ সময়ের দিক থেকে অপ্রতুল, কারণ রিকশা চালনার প্রশিক্ষণ একটি কারিগরি বিষয়, যা সড়ক নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

তিনি আরও বলেন, যদি প্রশিক্ষকেরা যথাযথভাবে চালকদের প্রশিক্ষণ দিতে না পারেন, তাহলে এই উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাবে না এবং রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় হতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদে প্রশিক্ষকদের যুক্ত রাখা ও মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাটা জরুরি।