ঢাকা | জুন ২৫, ২০২৫ - ২:৫৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

৬০ লাখ টাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব: প্রবাসীর লাশ ফেলে পালালেন স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন

  • আপডেট: Tuesday, June 24, 2025 - 1:33 pm

জাগো জনতা অনলাইন।। মাদারীপুরের রাজৈরে হালিম খান (৪২) নামের এক ইতালি প্রবাসীর মরদেহ হাসপাতালে রেখে পালিয়েছেন তার স্ত্রী রেশমা বেগমসহ (৩০) শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে মরদেহ ময়নাতদেন্তর জন্য মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

পুলিশ, স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের নগর গোয়ালদি গ্রামের মৃত হাজী বালা উদ্দিনের ছেলে হালিম খান। ২০১৮ সালে পাশের দারাদিয়া গ্রামের ছোমেদ চোকিদারের মেয়ে রেশমা আক্তারের ফোনে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২১ সালের জানুয়ারীতে এ সম্পর্ক বিয়েতে গড়ায়।

বিয়ের পর আবার ইতালি চলে যান হালিম। সেখানে গিয়ে স্ত্রী ও তার শ্বশুরের নামে পর্যায়ক্রমে ৬০ লাখ টাকা পাঠান তিনি। সেই টাকা থেকে শ্যালক সবুজ চোকদার একটি মোটরসাইকেল কেনেন। তিন মাস আগে ছয় মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসেন হালিম খান। পরে মোটরসাইকেল কেনার টাকা ফেরত চান তিনি। এছাড়া বিদেশ থেকে পাঠানো টাকাও চান। এ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে তার বিরোধ তৈরি হয়।

 

সোমবার (২৩ জুন) রাতে বাড়ি থেকে হালিমকে শ্বশুরবাড়ি ডেকে নিয়ে যান শ্যালক সবুজ। পরে রাতেই তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে নিহতের পরিবার অভিযোগ।

নিহতের পরিবারের অভিযোগ, বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে পরের দিন মঙ্গলবার সকালে হালিম খানকে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক হালিমকে মৃত ঘোষণা করেন। এর কিছুক্ষণ পরই কৌশলে হাসপাতালে মরদেহ ফেলে রেখেই পালিয়ে যান দ্বিতীয় স্ত্রী রেশমাসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। খবর পেয়ে দুপুরে হাসপাতাল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

নিহতের পরিবার সূত্রে আরও জানা যায়, ২০০৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পারিবারিকভাবে মাদারীপুর শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকার আলি হায়দারের মেয়ে জবেদা সুলতানাকে বিয়ে করেনহালিম খান। পরে পারিবারিক বিরোধের জেরে ২০১৮ সালের জুন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নিহত হালিমের প্রথম ঘরে ১৩ বছরের মেয়ে ও সাত বছরের ছেলে আছে।

নিহত হালিম খানের প্রথম স্ত্রীর মেয়ে হিমু আক্তার বলে, ‘আমার বাবাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বাবার মাথার পেছনে ও সারা শরীরে পেটানোর চিহ্ন আছে। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই। আমার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার পরিবারের লোকজন বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’

এ বিষয়ে নিহতের বড় ভাই মো. রাজ্জাক বলেন, ‘আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়ের মাথায় ও সারা শরীরে আঘাতের দাগ আছে। এভাবে পিটিয়ে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানাই।’

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাসুদ খান বলেন, জানতে পেরেছি স্ত্রী ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন হালিমকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এসময় তারা মরদেহ রেখেই পালিয়ে যান। ঘটনাটি সন্দেহজনক। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাসান বলেন, ইতালি প্রবাসীর হত্যাকাণ্ডে নিহতের বড় ভাই রাজ্জাক বাদী হয়ে চারজনের নামে রাজৈর থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযুক্তরা সবাই পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।