ঢাকা | ডিসেম্বর ৪, ২০২৪ - ৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, স্ত্রীসহ আটক ৩

  • আপডেট: Friday, November 22, 2024 - 4:06 pm

ইউসুফ আলী খান: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বামী আল আমিন নিহত হয়েছেন দাবি করে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন স্ত্রী কুলসুম বেগম। পরে জানা যায় আল আমিন জীবিত। আলোচিত মামলার এ ঘটনায় বাদী কুলসুমকে আটক করে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত মামলা বাণিজ্য চক্রের দুইজনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। এদিকে থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বাদী দাবি করেছেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে ও নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে এ মামলা করানো হয়েছে।

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক রকিবুল হাসান এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শুক্রবার দুপুরে বাদীকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া আটক অপর দুইজনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

আটকরা হলেন মানিকগঞ্জের শিবালয় থানার টেপড়া গ্রামের রুহুল আমীন এবং ঘিওর থানার ফুলহারা গ্রামের শফিকুর রহমান।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজার থেকে তাদেরকে আটক করা হয় বলে জানান আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর।

জানা যায়, গত ২৪ অক্টোবর মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার স্বল্পসিংজুরি বাঙলা এলাকার আব্দুল খালেকের মেয়ে কুলসুম বেগম তার স্বামী আল আমিনকে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় এটি এজাহারভুক্ত হয়। বর্তমান ঠিকানা দেখিয়েছেন আশুলিয়ার জামগড়া।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট সকালে তার স্বামী আল আমিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয় মিছিলে তিনিও ছিলেন। তবে পরাজয় মেনে না নিতে পেরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী নির্বিচার গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার স্বামী নিহত হন।

পরে জানা যায় আল আমিন আন্দোলনে নিহত হননি।

মামলার পর তিনি জানতে পারেন, তাকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রী মামলা করেছেন। মামলা থেকে আসামির নাম প্রত্যাহার করার কথা বলে তার স্ত্রী লোকজনের কাছ থেকে টাকাপয়সাও নিয়েছেন। পরে তিনি নিজে থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন।

জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে আলোচিত এই ভুয়া মামলার কথা স্বীকার করেছেন বাদী কুলসুম বেগম।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেন, আল আমিনকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি সিলেটে থাকেন তিনি। দাম্পত্য কলহের জেরে সন্তানকে নিয়ে গত ২৮ আগস্ট সিলেট থেকে ঢাকার সাভারে বোনের কাছে চলে আসেন তিনি। পথে গাড়িতে শফিকুর রহমানের সঙ্গে তার দেখা ও কথা হয়। শফিক তাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে রুহুল আমিনের কাছে নিয়ে যান। সেখানে তার জন্মনিবন্ধন চেয়ে নেওয়া হয়। পরে একদিন সাভারের সেনা শপিং কমপ্লেক্সে শফিকুর রহমান ও রুহুল আমিন তাকে ডেকে নেন। পরে তারা জন্মনিবন্ধন দিয়ে একটি মামলা প্রস্তুত করেছেন বলে কুলসুমকে জানান।

কুলসুম বলেন, আমি রাজি না হলে নানা রকম ভয়ভীতি দেখায় তারা। পরে তারা আমাকে আদালতে নিয়ে উকিলের সামনে কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এরপর পাঁচ লাখ টাকা ও প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়ার কথা বলে মামলাটি করানো হয়। রুহুল ও শফিকুর আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বাধ্য করেছে (মামলা করতে)।

তিনি জানান, সবশেষ তারা কক্সবাজারে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে বলেন তাকে। তাদের কথামতো তিনি সেখানেই থাকেন। ১৯ নভেম্বর শফিক কক্সবাজার আসেন। ২১ নভেম্বর পুলিশ রুহুল আমিনকে নিয়ে কক্সবাজার থেকে তাদের আটক করে।

এ বিষয়ে বাদী কুলসুমের বড় বোন ফাতেমা বেগম বলেন, আমার বোনকে রুহুল আমিন নানাভাবে ভয় দেখিয়েছে। তার কাছে সবসময় পিস্তল থাকে বলে ভয়ভীতি দেখায়। রুহুল বেশ কয়েকজনের নাম মামলা থেকে কেটে দিয়েছে। সে সময় আমার ছোট বোনকে আদালতে নিয়ে যায় তারা। তারা বলত যে অজ্ঞাত ছেলেটা মারা গেছে, সে যেন বিচার পায়। সেজন্য এই মামলা করেছে। পরে বুঝতে পারি তারা একটি চক্র ও মামলা বাণিজ্যে জড়িত। পরবর্তীতে ঝামেলায় পড়ে আবার তারা একটি কাবিননামা তৈরি করে নিয়ে এসে আমাদের দেয়। সেই কাবিননামাটিও ভুয়া। আমার বোন আশুলিয়া কিংবা সাভারেই থাকত না। সে থাকত সিলেটে। শফিক ও রুহুল আমার বোনকে ফাঁসিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, কুলসুমের সঙ্গে আমার গাড়িতে পরিচয় হয়। পরে তাকে নিয়ে আমি রুহুল আমিনের কাছে যাই। তিনি মামলার সব কাজ করেছেন।

এ ব্যাপারে রুহুল আমিন বলেন, কুলসুমই এসে আমার কাছে মামলা করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছে। পরে আমি তাকে সহায়তা করেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোয়ার মাস্টার, বাশার, ইলিয়াস শাহী ও সারোয়ার তালুকদারের নাম মামলা থেকে বাতিলের জন্য এফিডেভিট করা হয়েছে। তবে তাদের কাছে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি।