ঢাকা | অক্টোবর ১৬, ২০২৪ - ৫:০০ পূর্বাহ্ন

রাউজানে পুলিশের কাছ থেকে ‘অপহরণকারী’কে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা

  • আপডেট: Wednesday, September 13, 2023 - 1:49 pm

রাউজান প্রতিনিধি : মা নাহিদা আকতারের বুক জুড়ে ছিল ছেলে শিবলী সাদিক হৃদয়। তাকে নিয়ে ছিল কত স্বপ্ন তার মা- বাবার। কিন্তু মা- বাবার সে স্বপ্ন আর পূরণ হল না।হবেও না আর কোনো দিন। গত ২৮ আগস্ট রাতে চট্টগ্রামের রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পঞ্চপাড়ার মুরগি খামার থেকে অপহরণের করা হয় হৃদয়কে।বাড়িতে হৃদয় ফিরে আসবে এই আশায় ছিলেন তার বাবা-মা।কিন্তু ১৪ দিন পর ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার ছেলে হৃদয়ের খন্ডিত কঙ্কাল উদ্ধারের কথা শুনার পর মা নাহিদা আকতার ও বাবা শফিকের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠে বাড়ির চারপাশের পরিবেশ।ছেলের পুরো লাশ দেখতে না পাওয়ায় কান্নাকাটি করতে করতে বেহুশ হয়ে পড়ে।১২ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) হৃদয়ের দেহাবশেষ ডিএনএ টেস্ট শেষে বিকেল ৫টার দিকে তার খন্ডিত দেহাবশেষ নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়িতে।এম্বুলেন্সে থাকা প্লাস্টিকে মোড়ানো হৃদয়ের দেহাবশেষ দেখে তার বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে থাকেন, আর হৃদয়ের  আর খোলে দাও। বাবা তার ছেলে হৃদয়ের প্লাস্টিকে মোড়ানো দেহাবশেষ খোলে নিয়ে ঘরে টুকে। বিছানায় হৃদয়ের দেহাবশেষ রেখে বাবা-মা দুই জনে জড়িয়ে ধরে কান্না আর বিলাপ করতে থাকেন। কিছু থামছে না মা- বাবার কান্নার আহাজারি। ঘরে থাকা স্বজনদের কান্নায়ও ভাড়ী হয়ে ওঠে চারপাশ। পরে হৃদয়ের দেহাবশেষ নিয়ে যাওয়া হয় পারিবারিক কবরস্থানে।সেখানে দাদির কবরের পাশে তাকে কবরস্থ করা হয়। হৃদয় কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী। কলেজে পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগির খামারে ম্যানেজারের চাকুরি করতেন।তার সাথে ওই মুরগির খামারে শ্রমিকের কাজ করতেন পাঁচ উপজাতি ছেলে৷ তাদের হাতে অপহরণ হয় হৃদয়। হৃদয়ের বাবা রাস্তার পাশে বসে নীরবে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন,দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও আমার ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম। তার আমার ছেলেকে হত্যা করে লাশটিও পুরো ফেরৎ দেয়নি। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই। মা নাহিদা আক্তার অশ্রুসিদ্ধ কণ্ঠে বলেন, আমার বুকের ধন কখন ঘরে ফিরে আসবে এ আশায় ছিলাম। কিন্তু উপজাতি সন্ত্রাসীরা আমার বুকের ধন মানিকে হত্যা করে আমার কাছে থেকে কেড়ে নিয়েছে। জানা গেছে, ১১ সেপ্টেম্বর উপজেলার কদলপুর ইউনিয়ন, রাঙ্গুনিয়া ও কাউখালি উপজেলার সীমান্তবর্তী রঙ্গিনছড় পাহাড় নাম স্থান থেকে হৃদয়ের দেহাবশেষ উদ্ধার করে নিয়ে আসার পথে পুলিশের গাড়ি অবরোধ করে উত্তেজিত কয়েক হাজার নারী-পুরুষ পুলিশের হেফাজত থাকা মামলার মূল আসামী উমংচিং মারমা (২৬) কে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিঠুনিতে হত্যা করে।আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা, পুলিশি কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাউজান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হাকিম বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের কোনো সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি বলে মঙ্গলবার বিষয়টি নিশ্চিত করে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল হারুন। তিনি বলেন,পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা করা, অন্যটি পুলিশের কাজে বাধা এবং গাড়ি ভাঙচুর করা। মামলায় আসামির সংখ্যা এবং নাম উল্লেখ করা হয়নি। দুটি মামলার আসামিদের সবাই অজ্ঞাতনামা। ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে। ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন আরও বলেন, ‘অভিযানে আসামি উমংচিং মারমার  দেখানো বিভিন্ন জায়গা থেকে অপহৃত যুবক হৃদয়ের দেহাবশেষ  উদ্ধার করে ফেরার পথে পঞ্চপাড়া গ্রামে নারী-পুরুষরা আমাদের পথরোধ করেন। উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়ি থেকে আসামি উমংচিং মারমাকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে। পুলিশ এ সময় কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়ে।’গত ২৮ আগস্ট রাতে মুরগির খামার থেকে হৃদয়কে অপহরণ করা হয়। অপহরণের দুদিন পর অপহরণকারীরা হৃদয়ের পরিবারে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের সদস্যরা ২ লাখ টাকা দিতে রাজি হয়।কয়েক দিন পর অপহৃত হৃদয়ের বাবা শফি বান্দরবান এলাকায় ডুলাপাড়ায় গিয়ে দুজনের হাতে দুই লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু তারা হৃদয়কে মুক্তি দেয়নি। অপহরণকারীরা ছেলেকে মুক্তি না দেওয়ায় তিনি থানায় অভিযোগ করেন। পরে আসামিদের ৬জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয় রাউজান থানায়।পুলিশ জানায়, এ মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁরা অপহরণের পর হৃদয়কে হত্যার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে। এরপর প্রধান আসামি উমংচিং মারমা নিয়ে হৃদয়ের লাশ উদ্ধারে বের হলে গণপিটুনিতে তাঁর মৃত্যু হয়। তার লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়। বাকি আটক দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন কাউখালি উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সাপমারা পাড়া মৃত উহ্লাপ্রুমং মারমার ছেলে আছুমং মারমা (২৬), কাপ্তাই উপজেলার ৪নং ওয়ার্ডের চিৎমরং আমতলীপাড়া উষাচিং মারমার ছেলে উক্যথোয়াই মারমা (১৯)।বাকি আসামিদেরও গ্রেফতার করা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।