গ্রাহকের তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও দম্পতি, স্ত্রী গ্রেপ্তার
আপডেট: Thursday, February 27, 2025 - 3:15 am
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।। গ্রাহকদের প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রিমিয়ার ইসলামী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি.-এর এনজিও পরিচালক সাতক্ষীরা মাছখোলা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফা খাতুনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরাতন সাতক্ষীরার মায়েরবাড়ি মন্দিরের পার্শ্ববর্তী একটি বাড়িতে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। এ সময় তার স্বামী এনজিও ম্যানেজার কামরুল ইসলাম আগেভাগেই পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়।
এর আগে পুরাতন সাতক্ষীরার আনসার ভিডিপি ক্যাম্পের উত্তর পাশে অবস্থিত বিলাসবহুল বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ।
এনজিওটির কর্মী দেবহাটা উপজেলার খেজুরবাড়ীয়া পারুলিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের কন্যা রীনা পারভীনের সাতক্ষীরা থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ এনজিও পরিচালক প্রতারক আরিফা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে।
মামলায় স্কুল শিক্ষিকা এনজিও পরিচালক আরিফা খাতনকে প্রধান করে ও তার স্বামী এনজিও ম্যানেজার কামরুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে। তাদের স্থায়ী ঠিকানা আশাশুনি উপজেলার কাকবাসিয়া গ্রামে। কামরুল ইসলামের পিতার নাম আবুল হোসেন।
মাছখোলা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফা খাতুন তারা স্বামী কামরুল ইসলাম যোগসাজশ করে স্ত্রী আরিফা খাতুন স্কুল শিক্ষিকা হওয়া স্বত্বেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে জেলা সাতক্ষীরা সমবায় অফিস থেকে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ২০১১ সালে প্রিমিয়ার ইসলামী সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি লি.-এর নামে এনজিওর রেজিস্ট্রেশন বাগিয়ে নেন। যার রেজিস্টেশন নং-২৭।
এনজিওর লাইন্সেস পেয়েই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নেতা-কর্মীদের ছত্র ছায়ায় থেকে ঋণ ও লোণ দেওয়া এবং ডিপিএস এর দুই থেকে তিনগুণ টাকা দেওয়ার কথা বলে মাঠ পর্যায় থেকে প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকদের নিকট থেকে প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন এনজিওটির পরিচালক স্কুল শিক্ষিকা আরিফা খাতুন ও তার স্বামী ম্যানেজার কামরুল ইসলাম। এরপর থেকে আরিফা খাতুন ও তার স্বামী কামরুল ইসলামকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক সময় যে সংসারে তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাত তারা এখন সাতক্ষীরা শহরের বিলাস বহুল বাড়ি, গাড়ীসহ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ব্যাংক একাউন্টেও রয়েছে কোটি টাকা।
মামলার নথি সূত্রে ও ভুক্তভোগী এবং থানা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, দেবহাটা উপজেলার খেজুরবাড়ীয়া পারুলিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের কন্যা রীনা পারভীন এনজিওটিতে ২০১২ সালে মাঠ পর্যায়ে কর্মী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ওই এনজিও পরিচালক আরিফা খাতুন ও তার স্বামী ম্যানেজার কামরুল ইসলাম তার মাধ্যমে এনজিওর ডিপিএস এর মাধ্যমে তার দুই বোন পুলিশ সদস্য রত্না খাতুন ও ঝর্ণা খাতুন এবং হেনা খাতুন, রেজওয়ানা খাতুন, ইউসুফ আলী, আমেনা খাতুন, রেশমা খাতুন, ইমরান ও রফিকুল ইসলাম গংদের কাছ থেকে ৬৪টি বইয়ের মাধ্যমে ৩৪ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা গ্রহণ করেন।
দীর্ঘ প্রায় ৪ বছর ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হলেও তাদের ন্যায্য পাওনা টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে বিভিন্নভাবে বিগত আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্র ছায়ায় থেকে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। দিনের পর দিন গ্রাহকরা তাদের সাথে যোগাযোগ করে টাকা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় কয়েক দফায় বসাবসি হয়। এক পর্যায়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রাহকদের পাওনা টাকা দিতে স্বীকার হয়ে তারা গ্রাহকের টাকা না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। এক পর্যায়ে বহু হয়রানি ও লাঞ্ছনার স্বীকার হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা কন্যা রীনা পারভীন বাদী হয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই মহাসিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে এনজিও পরিচালক স্কুল শিক্ষিকা আরিফা খাতুনকে (৪০) গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই মহাসিন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, প্রায় দুই শতাধিক গ্রাহকের নিকট থেকে সঞ্চয় ও জমা দেওয়া ডিপিএসের প্রায় তিন কোটি টাকা এনজিও পরিচালক আরিফা খাতুন ও তার স্বামী ম্যানেজার কামরুল ইসলাম আত্মসাৎ করেছে। এনজিও কর্মী ও ওই এনজিওর গ্রাহক রীনা পারভীনের দেওয়া লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়।
তিনি আরও বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে থানাতে বসাবসি হলে তারা মামলাটি গ্রহণ না করার অনুরোধ জানিয়ে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিবেন বলে জানান। পরবর্তী সময়ে তারা গ্রাহকের টাকা না দিয়ে বাদী পক্ষকে হুমকি-ধমকি ও লাঞ্ছিত করে স্বামী-স্ত্রী আত্মগোপনে চলে যান।
এ ঘটনায় মামলা রেকর্ড হলে অভিযান চালিয়ে দুপুরে একটি বাড়ী থেকে এনজিও পরিচালকে আরিফা খাতুনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।