হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়ে যা বললেন সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার মহেশ সাচদেব
জাগোজনতা অনলাইন : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাকে ফেরত পাঠাতে নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সেই চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও, রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি নয়াদিল্লি।
তবে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার মহেশ সাচদেব সোমবার জানিয়েছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সরকারের প্রত্যর্পণ অনুরোধের বিরুদ্ধে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন।
ভারতীয় এক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকার দেন মহেশ সাচদেব। সেখানে তিনি বলেন, ভারতের প্রত্যর্পণ অনুরোধ যেমনভাবে বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ বিভিন্ন শর্তে প্রত্যাখ্যান করেছিল, হাসিনাও তেমনি বলতে পারেন- তিনি তার দেশের সরকারকে বিশ্বাস করেন না ও তার প্রতি অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাবেক এই হাইকমিশনার আরও বলেন, শেখ হাসিনা এমন কিছু প্রকাশ করতে পারেন, যা বাংলাদেশের সরকারকে বিব্রত করতে পারে। তাই আমি মনে করি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রভাবিত হবে, কিন্তু এগুলো প্রত্যাশিত পদক্ষেপ। অবশ্যই এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ প্রোপাগান্ডার জন্য ব্যবহৃত হবে। বলা হবে, আমরা চেয়েছি, কিন্তু তারা এখনও মানেনি। তাই এটি ভারতের বিরুদ্ধে আরেকটি দাগ ও বাংলাদেশের সমস্যাগুলোকে ভারতের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা।
“তিনি (হাসিনা) কত দিন ভারতে থাকবেন তা নির্ধারণ করা যাবে না। আমি মনে করি, তার অনুরোধটি আশ্রয়ের জন্য। আশ্রয়সংক্রান্ত অনুরোধগুলো সাধারণত রাজনৈতিক ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়। এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই, যোগ করেন মহেশ সাচদেব।
সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, “আমার জানামতে, এ ধরনের আশ্রয়ের কোনও সময়সীমা নেই। তাছাড়া আগেই জানা গিয়েছিল যে, ভারত শেখ হাসিনাকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে এবং তাকে এখান থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের কাছে অনুরোধও করেছিলেন, কিন্তু কেউই তাকে সেসব দেশে স্থায়ী হওয়ার অনুমতি দেয়নি।”
সাচদেব আরও বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তিতে বিভিন্ন শর্ত রয়েছে, যা রাজনৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ নাকচ করে। তবে অপরাধমূলক বিষয়গুলো রাজনৈতিক বিবেচনা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, এসব শর্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা আদালতে গিয়ে বলতে পারেন যে, তার প্রতি অন্যায় ও অবিচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভারতও বলতে পারে, আমরা নিশ্চিত নই যে হাসিনা ন্যায়বিচার পাবেন কি না। মনে রাখতে হবে, ভারতীয় বিচারব্যবস্থা ও ভারতীয় জেলগুলো ইউরোপীয় মানের নয়- এই অজুহাতে ইউরোপ থেকে ভারতের সন্ত্রাসীদের প্রত্যর্পণ আটকে দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং, এসব বিষয় ঘটতে পারে ও একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় রুপ নিতে পারে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি প্রথমে ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত হয় ও ২০১৬ সালে এটি সংশোধিত হয়। এটি ছিল দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। তবে, দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি রাজনৈতিক প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রে প্রত্যর্পণ নাকচ করার অনুমতি দেয়।
মহেশ সাচদেব বলেন, কর্তৃপক্ষ আজ প্রকাশ্যে উল্লেখ করেছে যে, এই বিশেষ অনুরোধের জন্য ভারতকে একটি ভারবাল নোট দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তাকে ন্যায়বিচারের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে প্রয়োজন। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কী অভিযোগ রয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়নি। আমাদের বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে, তার শর্তাবলি প্রযোজ্য হবে বলে আমি মনে করি। একই সঙ্গে দুই-তিনটি যোগাযোগ প্রাসঙ্গিক হতে পারে।
সাচদেব বলেন, ভারবাল নোট দুই সরকারের মধ্যে যোগাযোগের সর্বনিম্ন স্তর। এটি অগ্রাধিকার নির্দেশ করে। এটি কেবল কিছু রেকর্ড রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। কারও ভিসার আবেদনও একটি ভারবাল নোট। একজন সাধারণ ব্যক্তি যদি সাংস্কৃতিক টুর্নামেন্ট বা এ ধরনের কোনও কাজে যান, তার জন্যও অপর পক্ষকে ভারবাল নোট দেওয়া প্রয়োজন, যাতে তার যত্ন নেওয়া হয়। যদি গুরুত্ব নির্দেশ করতে হয়, তবে আরও উচ্চ স্তরের পদক্ষেপ নিতে হবে।
সাচদেব বলেন, শেখ হাসিনা ইস্যু ভারতের জন্য একটি উল্টাপাল্টা অবস্থা। কারণ, তাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধটি যেমন সরকারি, তেমনি তার জন্য আশ্রয়ের অনুরোধটিও সরকারি। আমি মনে করি, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করেন, শেখ হাসিনাকে দ্রুত প্রত্যর্পণ করা হবে না। কারণ এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
মহেশ সাচদেব বলেন, আমি মনে করি, ভারত-বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে। এমনকি, এই মাসের শুরুর দিকে আমাদের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশে যাওয়ার আগে থেকেই। সেই সঙ্গে তারা এই সম্ভাবনাগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বাংলাদেশের দাবি নতুন কিছু নয়। আগস্টে তিনি দেশত্যাগ করার পর থেকে এটি প্রায়ই সামনে আনা হয়েছে। সূত্র: এএনআই