পার্বত্য চট্টগ্রামের ধর্ষণ ঘটনাকে প্রথাগত বিচারের নামে ধামাচাপার চেষ্টা, প্রতিবাদে পিসিসিপি’র মানববন্ধন
বান্দরবান প্রতিনিধি।। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত একাধিক ধর্ষণ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং প্রথাগত বিচারের নামে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে বান্দরবানে মানববন্ধন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)।
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে দশটায় বান্দরবান প্রেস ক্লাব চত্বরে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে বক্তারা পার্বত্য এলাকায় নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিচার প্রক্রিয়াকে টাকার বিনিময়ে প্রভাবিত করে ধামাচাপা দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি তোলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের (পিসিএনপি) কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মজিবুর রহমান মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ। এর বিচার কেবল রাষ্ট্রীয় আইনেই হতে পারে। প্রথাগত বিচারের নামে এই অপরাধকে টাকা-পয়সার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি অবিলম্বে সাম্প্রতিক সব ধর্ষণ ঘটনার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার দাবি করেন।
বান্দরবান জেলা পিসিএনপির সভাপতি আসিফ ইকবালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা পিসিএনপির সভাপতি মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পৌর পিসিএনপির সভাপতি শামসুল হক সামু ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদ চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম, বান্দরবান জেলার পিসিসিপির সাধারণ সম্পাদক হাবিব আল মাহমুদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন পিসিসিপির জেলা দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মিছবাহ উদ্দীন।
মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান ধর্ষণ ঘটনাগুলোতে স্থানীয় কার্বারিরা টাকার বিনিময়ে বিচার ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি কাপ্তাইয়ের ধর্ষিতা নারীকেও কার্বারি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে, যা অমানবিক ও লজ্জাজনক।” বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, সামান্য আর্থিক জরিমানার মাধ্যমে কি ধর্ষণের মতো অপরাধের বিচার হতে পারে? এটি ধর্ষকদের আরও উৎসাহিত করবে।
বক্তারা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি নৃশংস ধর্ষণ ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবি জানান। এর মধ্যে রয়েছে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে এক প্রতিবন্ধী মারমা নারী, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় এক ত্রিপুরা কিশোরী এবং খাগড়াছড়ির পানছড়িতে এক চাকমা নারী শিক্ষিকাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনা।
পিসিসিপি নেতৃবৃন্দ ধর্ষণকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি অবিলম্বে প্রথাগত বিচার ব্যবস্থার সংস্কার দাবি করেন, যাতে কোনো গুরুতর অপরাধ টাকার বিনিময়ে ধামাচাপা দেওয়া না যায়। তারা বলেন, যদি এই প্রথাগত বিচার ব্যবস্থা অপরাধের বিচার করতে ব্যর্থ হয়, তবে এটিকে সংস্কার করে সকল অপরাধের বিচার রাষ্ট্রীয় আইনেই নিশ্চিত করতে হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত সবাই অবিলম্বে এই অমানবিক প্রথা বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় আইনে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানান।











