আজ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে বাগেরহাটের মোংলায় বিভিন্ন সড়কে আগুন জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে হরতাল বাস্তবায়ন করছেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতা–কর্মীরা। এ কর্মসূচি চলবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছয়টা পর্যন্ত।
নির্বাচন কমিশনের নতুন সীমানা পুনর্বিন্যাসে জেলার একটি সংসদীয় আসন কমিয়ে তিনটিতে নামিয়ে আনার প্রতিবাদে এই কর্মসূচির ডাক দেয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত বাগেরহাটের সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর২৫) ভোর থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর কেন্দ্রিক এ অঞ্চলে সার্বিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় ।
হরতালের কারণে মোংলা ইপিজেড ও আশপাশের গার্মেন্টস ও শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। যানবাহন সংকট ও নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগে অধিকাংশ শ্রমিক কর্মস্থলে যেতে না পারায় উৎপাদন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে শিল্প মালিকরা।
অন্যদিকে, প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন মোংলা ঘাট দিয়ে। হরতালের কারণে ঘাটে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও খেয়া চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা গন্তব্যে যেতে না পেরে ঘরে ফিরে যেতে বাধ্য হন। শহরের দোকানপাট, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও ছিল বন্ধ। ফলে পুরো উপজেলায় নেমে আসে এক অচলাবস্থা।
এ সময় সমাবেশে বক্তব্য দেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির অন্যতম নেতা ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মোঃ শামিমুর রহমান শামীম। তিনি বলেন,
“এ আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়। এটি বাগেরহাটবাসীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। সংসদীয় আসন কমিয়ে জনগণকে বঞ্চিত করা যাবে না। আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই—৪ আসন পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”
তিনি আরো বলেন বাগেরহাটবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক আসন কমিয়ে দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত শুধু অযৌক্তিক নয়, বরং মানুষের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব সংকুচিত করার অপচেষ্টা। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব এবং জনগণের অধিকার আদায়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলব।”
হরতাল চলাকালে সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা এড়াতে শহরের প্রবেশপথ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তবে বিকেল পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, ৪৮ ঘণ্টার হরতাল অব্যাহত থাকবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর২৫) পূর্ণ দিবস হরতাল পালিত হবে। এ সময়ও শিল্প-অর্থনীতি ও জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাগেরহাটে একটি সংসদীয় আসন কমানোর সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক প্রভাবই ফেলছে না, বরং এ অঞ্চলের শিল্প-অর্থনীতি ও জনজীবনেও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। জনগণ মনে করছে, তাদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করে দেওয়া হচ্ছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, মোংলার এ হরতাল জনজীবন, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষাঙ্গনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। আন্দোলনকারীরা একবাক্যে ঘোষণা দিয়েছেন—“বাগেরহাটে ৪ আসন পুনর্বহাল না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।