পাহাড় অক্ষুন্ন রেখেই বার্ণ ইউনিট করবে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
এম আর আমিন।।
চকবাজার গোয়াছিবাগান এলাকায় চমেক হাসপাতালের মালিকানাধীন পাহাড় না কেটেই বার্ণ ইউনিট তৈরি করবে কর্তৃপক্ষ। আজ বৃহম্পতিবার (৭/৯/২০২৩) দুপুরে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ও চট্টগ্রামের পরিবেশ কমীর্দের সাথে দ্বিপক্ষীয় এই বৈঠকে পাহাড়ের কেটে ফেলা অংশের পাশে রিটেইনিং ওয়াল দিয়ে গাছ লাগানো হবে মর্মেও ঐক্যমত হয়। বৈঠকে পরিবেশ কমীর্দের পক্ষ থেকে পাহাড় রক্ষা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের একটি কপি চমেক হাসপাতাল পরিচালককে হস্তান্তর করা হয়।
আলোচনার এক পর্যায়ে কেটে ফেলা গাছের শেকড় উৎপাটন করলে ক্ষতিগ্রস্থ পাহাড়টি ধ্বসে পড়বে এবং পেছনের আরেকটি পাহাড়ও ক্ষতিগ্রস্থ হবে—পরিবেশবাদীরা এমন যুক্তি উত্থাপন করলে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিকড় উঠানো হবে না মর্মে আশ্বস্থ করেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হোস্টেল সংলগ্ন গোয়ছি বাগান পাহাড়ের কিছু অংশ কেটে বার্ণ ইউনিট নির্মান করবে চমেক কর্তৃপক্ষ এই মর্মে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশিত হলে বেলা ৬/৯/২৩ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং চমেক হাসপাতাল পরিচালককে নোটিশ দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে বৃহস্পতিবার থেকে পরিবেশ সংগঠনদের সমন্বয়ে সামাজিক আন্দোলনের ঘোষণা দেয় হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ আজকে ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সকালে এই বিষয়ে পরিবেশ কমীর্দের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করতে আগ্রহ দেখালে, বেলা চট্টগ্রাম অফিস সমম্বয়কারী মনিরা পারভিন রুবা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক স.ম বখতেয়ার, বেলার নেটওয়ার্কিং মেম্বার সিনিয়র সাংবাদিক আলীউর রহমানপরিবেশ সংগঠক মারুফ হাসান রুমি, গ্রিন ফিংগার কো ফাউন্ডার রিতু পারভিন, বেলার কর্মকতা ফারমিন এলাহি ইরা চমেক পরিচালকের সম্মেলন কক্ষে এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়। উক্ত বৈঠকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চমেক হাসপাতাল বার্ণ ইউনিট পরিকল্পনা ম্যাপ উপস্থিত পরিবেশ কমীর্দের প্রদর্শন করে তার যৌক্তিকতা ব্যখ্যা করেন। সেই সাথে গোয়াছি বাগান পাহাড় কাটা বা উক্ত পাহাড় এলাকা থেকে কোন ধরণের মাটি অপসারণ করবেন না বলে জানান। তিনি উক্ত এলাকায় ইতোমধ্যে দুই হাজারের অধিক দেশীয় গাছ লাগানো শুরু হয়েছে বলে জানান। এছাড়াও পাহাড়ের গোড়ায় গাইড ওয়াল দিয়ে বার্ণ ইউনিট ভবনটি তৈরি করা হবে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
এর আগে সকাল আজ বৃহস্পতিবার ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্ত্বরে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, গ্রিন ফিংগার্স ও ভোরের আলো নামের পাঁচটি সংগঠনের উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। মানববন্ধন সমাবেশে বক্তরা বলেন, এক সময় চট্টগ্রাম মহানগরী পাহাড়ের সৌন্দর্যে্য দেশি বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষিত করতো। কিন্তু এখন সেই চট্টগ্রাম পাহাড়বিহিত জলাবন্ধতারা নগরীতে পরিনত হয়েছে। স্বাধীনতার পরে নগরীর ৬০ শতাংশ পাহাড় কাটা হয়ে গেছে। বাকি ৪০ শতাংশেও পড়ছে কোদালের আঘাত। এই অবস্থা বন্ধ করা না হলে একটি পাহাড়ও অবশিষ্ট থাকবে না। সাতকানিয়া বিজিবি পাহাড় কাটছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর আকবর শাহ, বিজয় নগর, সিডিএ ডাইর্ভাসন সড়ককের উভয় পাশে এখনও রাতের আধারে পাহাড় কাটা চলছে। প্রশাসন রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করবে তা কখনও সচেতন নাগরিক সমাজ মেনে নিবে না।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম চট্টগ্রাম সভাপতি প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলীর সভাপতিত্বে ও বেলার নেটওয়ার্কিং মেম্বার আলীউর রহমানের সঞ্চালনায় মানববন্ধন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরাম সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, বেলার চট্টগ্রাম সমন্বয়ক মনিরা পারভিন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা চট্টগ্রাম সাধারণ সম্পাদক স ম বখতিয়ার, অধ্যাপক ড. মঞ্জরুল করিম, পরিবেশ সংগঠক জেসমিন সুলতানা পারু, মিতুল দাশ গুপ্ত, সাংবদিক প্রিতম দাশ, সাংস্কৃতিক কমীর্ ও অমিতাভ সম্পাদক শ্যামল চৌধুরী আমাদের নতুন সময় চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান কামাল পারভেজ, গ্রিন ফিংগার্স কো ফাউন্ডার রিতু পারভিন, ভোরের আলো সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক রাজিব সেন প্রিন্স, সংগঠক হাসান মারুফ রুমি, বেলা কর্মকর্তা ফারমিন এলাহি ও প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তরা ২০০৭ সালে গঠিত শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটির ৩৬ সুপারিশ বাস্তবায়ন, প্রতিটি পাহাড়ের ধরণ নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে বাগান বা পর্যটন অবকাঠামো নির্মান করে সার্বক্ষণিক তদারকি করা, জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে একটি হট লাইন চালু করে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে্রট এর তত্ত্ববধানে অভিযাগে আসলে তাৎক্ষণিক আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে ঘোষণা দিয়ে তা পরিচালনা করা এবং প্রতিটি পাহাড়ের পরিমাপ মালিকানা পরিচিতি পাহাড়ের ধরণ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করা মর্মে পাঁচটি দাবী উত্থাপন করা হয়ে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এইসকল দাবী বাস্তবায়িত না হলে আরো কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।