নিজস্ব প্রতিবেদক।। অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ মাসে ৪০ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৯টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। গত তিন মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১১টি। মানবাধিকার সংস্থা অধিকার তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে।

এতে ১৪ মাসের তথ্যও তুলে ধরা হয়। গতকাল শুক্রবার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সংস্থাটি।

অধিকার ২০২৪ সালের ৯ আগস্ট থেকে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরে। গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে।

তাদের দেড় দশকের শাসনকালে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ নিয়ে সরব ছিল দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো। গত বছরের ৮ আগস্ট যে
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়, সেই সরকারের অন্যতম উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন অধিকারের প্রতিষ্ঠাতা আদিলুর রহমান খান। বিতর্কিত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের মামলায় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দণ্ডিত হয়েছিলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর হাইকোর্টের রায়ে খালাস পান তিনি।

অধিকারের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ৯ আগস্টের পর ওই মাসে দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি।

সেপ্টেম্বরে ৯ জনের পর অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে একজন করে মারা যায়। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মারা যায় পাঁচজন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন মারা যায়। মার্চ ও এপ্রিল মাসে মারা যায় একজন করে। এরপর মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যকাণ্ডের শিকারের সংখ্যা যথাক্রমে চার, তিন, ছয়, তিন ও দুই। এই ৪০ জনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৯ জন গুলিতে মারা গেছে, নির্যাতনে মারা গেছে ১৪ জন, পিটিয়ে মারা হয়েছে সাতজনকে।

গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যে ১১ জন নিহত হয়েছে, তার তিনটি ঘটনার জন্য পুলিশ, একটি ঘটনার জন্য সেনা সদস্য এবং সাতটি ঘটনার জন্য যৌথ বাহিনীকে দায়ী করেছে অধিকার। অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১৪ মাসে মব সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয় ১৫৩ জন। এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বর মাসে, ১৮টি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এ ঘটনা ছিল ১৭টি। গত তিন মাসে এমন ঘটনার সংখ্যা ৪৫।

অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সাত হাজার ৯৭৯টি রাজনৈতিক সহিংসতার হিসাব দিয়েছে অধিকার। এ ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে এ বছরের মার্চে, ৯৪৪টি। ৮৬২টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। গত বছরের আগস্টে সংখ্যাটি ছিল ৫০০। ৭৯৮টি ঘটনা ঘটে এ বছরের এপ্রিলে। গত জুন, জুলাই ও আগস্টে সংখ্যাটি ছিল যথাক্রমে ৪৮৯, ৫৭৯ ও ৬৫৮। গত সেপ্টেম্বরে সেই সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় ৩০০টিতে। অধিকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, এ সময়কালে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ২৪২টি ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত সেপ্টেম্বরে, ৩৪টি। এ ছাড়া গত মার্চ মাসে ৩০টি, মে মাসে ২৮টি, আগস্টে ২৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৫টি ঘটনায় আক্রান্ত হন সাংবাদিকরা।

এ ছাড়া ১৪ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয় ২৮১ জন। সবচেয়ে বেশি ব্যক্তি নিহত হয় এ বছরের মার্চে ৪৪ জন, এরপর এক মাসে বেশি নিহত হয় গত বছরের আগস্টের ২৩ দিনে, ৩৩ জন।