জনগণের আকাঙ্ক্ষা না বুঝলে রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ নেই: আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক।। শেখ হাসিনা পালানোর পর যে রাজনৈতিক দল জনগণের আকাঙ্খা বুঝতে পারবে না, তাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের জনগণের মনোজগতে যে পরিবর্তন, প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা জেগেছে তা যে রাজনৈতিক দল বুঝতে পারবে না আগামী দিনে তাদের রাজনীতিতে কোন জায়গা থাকবে না।’
‘ফ্যাসিস্ট আমলে গণমাধ্যম, বর্তমান অবস্থা : জনগণের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
জিয়াউর রহমান স্টাডি সার্কেল, যুক্তরাষ্ট্র- এর উদ্যোগে আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ভবনের ক্র্যাব মিলনায়তনে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার এবং বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আশিক ইসলাম।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জিয়াউর রহমান স্টাডি সার্কেল, যুক্তরাষ্ট্র- এর প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ কাসেম। এতে বক্তৃতা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার উপ-প্রধান বার্তা সম্পাদক জিএম রাজিব হোসেন প্রমুখ।
আমীর খসরু বলেন, শেখ হাসিনা পালানোর পর মানুষের মনোজগতে প্রত্যাশা ও আকাক্সক্ষা বেড়েছে। যে রাজনৈতিক দল এই আকাক্সক্ষা বুঝতে পারবে না, অনুধাবন করতে পারবে না, তাদের দেশের রাজনীতিতে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামলে গণমাধ্যম বন্ধসহ যে ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো ঘটারই কথা। আমি কিন্তু মোটেও আশ্চর্য হইনি ঘটনাগুলো যে ঘটেছিলো তার জন্য। কারণ জনগণকে বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করলে, এ ধরনের ঘটনাগুলো না ঘটলে হাসিনা ক্ষমতায়ই থাকতে পারতো না। তা সম্ভবই ছিল না। ফলে এসব ঘটনা তার টিকে থাকার জন্য স্বাভাবিক ছিল। স্বৈরাচারকে টিকে থাকতে হলে এই কাজগুলো করেই টিকে থাকতে হয়। গণমাধ্যমের অধিকার কেড়ে নিয়েই তাদের টিকে থাকতে হয়।’
সাবেক এই মন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে শুধু সাংবাদিকতা নয় যারা সত্যিকার অর্থে ব্যবসা করতে চেয়েছিল তারা ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারেননি। ব্যবসা ছিল লুটপাটের ব্যবসা। এ জন্য সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার সুযোগ ছিল না। একইভাবে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রাজনীতিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনীতি ও গণমাধ্যমকেও গণতন্ত্রায়ণ করতে হবে। শুধু ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রত্যেকটি জায়গায় গণতন্ত্রের প্রতিফলন যদি ঘটাতে না পারেন তাহলে গণতন্ত্র সঠিকভাবে কাজ করবে না। অর্থনীতিতে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন, সাধারণ মানুষ যদি অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে না পারে আপনার রাজনীতির সফল হবে না। সাংবাদিকরা যদি মুক্ত ভাবে তাদের কাজ করতে না পারেন তাহলে গণতন্ত্র প্রতিফলিত হবে না।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আশিক ইসলাম। প্রবন্ধে তিনি বলেন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের পথ চিরতরে রুদ্ধ করতে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে। এই আইনের অধীনে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৩৬টি মামলা হয় এবং কমপক্ষে ৪ হাজার ৫২০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া এ আইনে ওই ৫ বছরে কমপক্ষে ৪৫১ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে ২০৯ জন সাংবাদিক জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত ও ১৯৭ জন স্থানীয় সাংবাদিক। অন্তত ৯৭ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৫০ জন স্থানীয় সাংবাদিক ছিলেন।