ঢাকা | সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫ - ১০:২১ অপরাহ্ন

শিরোনাম

পাকুয়াখালী ট্রাজেডি: বিচার না হলে রাজপথে- চট্টগ্রামে গোলটেবিল বৈঠকে হুঁশিয়ারি

  • আপডেট: Monday, September 8, 2025 - 11:54 am

চট্টগ্রাম ব্যুরো।। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সুলতান আহমেদ হলে আজ অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ গোলটেবিল বৈঠক, যার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ লিগ্যাল এইড কমিটি। বৈঠকের মূল প্রতিপাদ্য ছিল লংগদুর পাকুয়াখালীতে ৩৫ কাঠুরিয়া হত্যাকাণ্ডসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল গণহত্যার বিচার দাবি। দীর্ঘ তিন দশক ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এই বৈঠকে উঠে আসে ক্ষোভ, প্রত্যাশা এবং আন্দোলনের বার্তা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জাতীয় দৈনিক *জাগো জনতা*-এর প্রকাশক কাজী মজিবুর রহমান মজিব। তিনি বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত গণহত্যাগুলো শুধু স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদাহরণ। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হওয়া উচিত।”

বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। তিনি বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালি জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে অবিচার ও বৈষম্যের শিকার। রাষ্ট্রের উচিত তাদের নিরাপত্তা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।” প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম, যিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও বিচারহীনতার প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক *আমার দেশ* পত্রিকার চট্টগ্রাম রিজিয়ন প্রধান ও আবাসিক সম্পাদক এ এস এম জাহিদুল করিম কচি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগর সভাপতি আলহাজ্ব জান্নাতুল ইসলাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক লেখক ও গবেষক অধ্যক্ষ এম এ আমিন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মহানগর সভাপতি মো. এমদাদুল্লাহ সোহায়েল, প্রবীণ সাংবাদিক কামাল পারভেজ, নগর জামায়াত নেতা মো. মনছুরুল হাসান জিয়া, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের মহানগর সহ-সভাপতি মুহাম্মদ আবদুল কাদের, প্রচার সম্পাদক মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা নিজাম তালুকদার এবং যুবনেতা আরশাদুল ইসলাম।

বক্তারা বলেন, “১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর পাকুয়াখালীতে ৩৫ নিরীহ কাঠুরিয়াকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করে, লাঠি, দা ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এটি ছিল পরিকল্পিত গণহত্যা।” তারা আরও বলেন, “পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রায় ৩৫ হাজার নিরীহ বাঙালি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, কিন্তু আজও কোনো সরকার এসব হত্যার বিচার করেনি, ক্ষতিপূরণও দেয়নি।”

বক্তারা জোর দিয়ে বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করতে হবে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “এবারও যদি বিচার না হয়, তবে রাজপথে নেমে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।” নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিও উঠে আসে আলোচনায়।

এই গোলটেবিল বৈঠক শুধু একটি স্মরণ সভা নয়, এটি ছিল একটি ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক মহল এই দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।