ঢাকা | সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫ - ৪:৫৯ অপরাহ্ন

শিরোনাম

দক্ষিণ সিটির তিন কোটিপতি ঝাড়ুদার: ঢাকায় ফ্ল্যাট-প্লট, সন্তান পড়ে কানাডায়

  • আপডেট: Tuesday, September 16, 2025 - 9:24 am

জাগো জনতা অনলাইন।। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হলেও আয়-উপার্জন আর সম্পদের দিক থেকে বড় ব্যবসায়ী বা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদেরকেও ছাড়িয়ে গেছেন তারা। মাত্র ৭০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি, অথচ কেউ হয়েছেন পাঁচতলা ভবনের মালিক, কেউ আবার চালাচ্ছেন ব্যবসা—ছেলেমেয়েদের পাঠিয়েছেন বিদেশে পড়তে। এমনই তিন ‘ঝাড়ুদার’-এর সম্পদের খোঁজ মিলেছে নিউজ টোয়েন্টিফোর-এর অনুসন্ধানে।

এই তিনজনের মধ্যে রয়েছেন—আব্দুল লতিফ, আব্দুল জলিল এবং এখলাছ নামে তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। যারা শুধুই কর্মী নন, অনেক দিন ধরে ইউনিয়নের নেতাও। তাঁদের বিরুদ্ধে রয়েছে জমি দখল, চাঁদাবাজি ও জালিয়াতির অভিযোগ।

আব্দুল লতিফ—ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। একইসঙ্গে স্কেলিং ভেঞ্চারস অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ঝাড়ুদার হিসেবে, তবে এখন থাকেন হাজারীবাগে ছয়তলা ভবনের একাধিক ফ্ল্যাটে। তার স্ত্রীর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, এই ভবনের একটি ফ্ল্যাট তাদের মালিকানাধীন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দলীয় প্রভাব ও ইউনিয়নের নেতৃত্ব কাজে লাগিয়ে ১৬ বছরে লতিফ সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা তুলেছেন প্রায় ৭০ কোটি টাকা। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের কোয়ার্টার পাইয়ে দেওয়ার নামে একটি ভবনের বাসিন্দাদের কাছ থেকে তুলেছেন ৪৮ লাখ টাকা। রয়েছে ঢাকার আরও দুটি ফ্ল্যাট, কুমিল্লার হোমনায় একাধিক সম্পত্তি, দোকান ও ফার্মেসি। ছেলেকে পাঠিয়েছেন কানাডায়।

স্কেলিং ভেঞ্চারস ইউনিয়নের সহ-সভাপতি আব্দুল জলিল ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি মাসে ৭০,২৫০ টাকা বেতন পেতেন। অথচ এখন তিনি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগে তিনতলা ভবনের মালিক। সহকর্মীদের দাবি, কামরাঙ্গীরচরেও তার আরও সম্পত্তি রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। তবে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, সম্পদের পরিমাণ বেতনের তুলনায় অস্বাভাবিক।

সাউথ সিটির পরিচ্ছন্নতাকর্মী এখলাছ কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া এলাকায় পাঁচতলা ভবনের মালিক। এমনকি পাশেই নির্মাণাধীন একটি ভবনেও শেয়ার রয়েছে তার। অথচ এখনো সিটি কর্পোরেশনের কোয়ার্টারে ফ্ল্যাট দখল করে বসবাস করছেন।

সহকর্মীদের অভিযোগ, এই ধনী ঝাড়ুদাররা নিজেরা কাজ না করে অন্য কাউকে দিয়ে দায়িত্ব করান। কেউ কেউ আবার ছুটিতে থেকে অর্ধেক বেতন নিজে নেন, বাকিটা দেন প্রক্সি কর্মীকে। এক শ্রমিক বলেন, “আপনারা যদি দেখতে চান, কারা চাকরি পাইতেছে, তাহলে দেখবেন যাদের ট্যাগ আছে, তারাই চাকরি পায়। যার যা দরকার, তারা পায় না।”

অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, এই ঝাড়ুদার নেতারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও এখন বিএনপির নেতৃস্থানীয় পরিচিতি পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে অর্থ ও ক্ষমতার দখল নিয়েছেন তারা।