ঢাকা | ডিসেম্বর ১৮, ২০২৫ - ৬:৫০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

চট্টগ্রামে পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী থাকবে না: সিএমপি কমিশনার

  • আপডেট: Thursday, December 18, 2025 - 5:14 pm

চট্টগ্রাম ব্যুরো।।

চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী বা সন্ত্রাসী গ্রুপ থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার ও অতিরিক্ত আইজিপি হাসিব আজিজ।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের কর্ণফুলী হলে প্রেস ক্লাব আয়োজিত সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাংবাদিকদের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, নানা রকমের বাহিনী আছে। আমার চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশ বাহিনী ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী থাকতে পারবে না। সাজ্জাদ বাহিনী, লাল্টু বাহিনী, পল্টু বাহিনী—এই সমস্ত বাহিনীকে নির্মূল করতে হবে। নির্মূল মানে নির্মূল। প্রয়োজনে চরম পন্থা অবলম্বন করতেও আমি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করব না।

হাসিব আজিজ বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে। এই অভিযান আমরা আরও তিন-চার মাস আগেই শুরু করেছি। নির্বাচন সংক্রান্ত নানা রকম চ্যালেঞ্জ আছে, চ্যালেঞ্জগুলো এখন মোটামুটি দৃশ্যমান। আমরা বুঝতে পারছি কোন কোন জায়গা থেকে কী ধরনের ঝুঁকি আমাদের ওপর আসতে পারে। ঝুঁকির বিষয়টি ঢাকায় দেখলাম, চট্টগ্রামে দেখলাম, খুলনায় দেখছি। এতদিন ধরে ‘পতিত স্বৈরাচার’, এখন আরেকটা আসছে ‘বিতাড়িত স্বৈরাচার’। এই বিতাড়িত স্বৈরাচারের যারা কুচক্রী ও দুর্বৃত্ত, যারা দোসর এবং তাদের যে বিদেশি প্রভু, তারা চেষ্টা করছে বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচন হতে না দেওয়া এবং একপর্যায়ে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। বিতাড়িত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ এবং তাদের বিদেশি প্রভুদের এই প্রচেষ্টাকে আমাদের নস্যাৎ করতে হবে। অবশ্যই নস্যাৎ করতে হবে।

পুলিশ কমিশনার বলেন, যেকোনো রাষ্ট্র তিনটি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। একটি নির্বাহী বিভাগ, একটি বিচার বিভাগ এবং আরেকটি হচ্ছে সার্বভৌম সংসদ—যেখানে সাধারণ নাগরিকদের, সাধারণ মানুষের, জনগণের সার্বভৌমত্ব নিহিত। এই তিনটি বিভাগের মধ্যে একটি ভারসাম্যমূলক অবস্থান তৈরি হয় এবং সেই ভারসাম্যের ওপর ভিত্তি করে একটি রাষ্ট্র টিকে থাকে। পরবর্তীকালে বলা হলো, এর বাইরেও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ রয়েছে, সেটি হচ্ছে মিডিয়া।

এই যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গ রয়েছে, এগুলো যদি একটি অ্যালাইনমেন্টে চলে আসে, পরস্পরের সঙ্গে এক হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রব্যবস্থায় কতখানি বিপর্যয় ঘটে—তা আমরা গত ১৭ বছরে দেখেছি। সাধারণ প্রশাসন, বিচারালয়, পুলিশ, সাংবাদিক—সব এক অ্যালাইনমেন্টে চলে এসেছিল। রুলিং পার্টি আওয়ামী লীগ তাদের এক অ্যালাইনমেন্টে নিয়ে এসেছিল। এর ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থা একটি বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। আওয়ামীপন্থী প্রশাসন, আওয়ামীপন্থী বিচারক, আওয়ামীপন্থী পুলিশ, আওয়ামীপন্থী সাংবাদিক-সব এক অ্যালাইনমেন্টে। ফলাফল হিসেবে একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল।

পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে সিএমপি কমিশনার জানান, লুণ্ঠিত অস্ত্রের ৮০ শতাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ অস্ত্র পাহাড়ি এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের হাতে চলে গেছে বলে তথ্য রয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে এসব অস্ত্র উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে।

মতবিনিময় সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে একুশে পদকপ্রাপ্ত ও দৈনিক আজাদী পত্রিকার সম্পাদক এম. এ. মালেক বলেন, জনগণের মধ্যে পুলিশের প্রতি এক ধরনের ভীতি থাকে। এই ভীতিটা দূর করে আমরা যেন পুলিশের কাছে গিয়ে সমাজের অপকর্মগুলোর তথ্য দিতে পারি। তথ্য দিলে পুলিশ সেখানে গিয়ে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কারণ পুরো শহরে সব জায়গায় একসঙ্গে যাওয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদুল করিম কচির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. আরিফ।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি জাহিদুল করিম কচি বলেন, পুলিশের প্রতি প্রেস ক্লাবের সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত থাকবে। শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনারের সাহসী বক্তব্য ও স্পষ্ট অবস্থান আমাদের জন্য গর্বের। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়ার পর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব নতুন পরিবেশে সবাইকে সহযোগিতার ভিত্তিতে একত্র করতে পেরেছে। আমরা সবাই একে অপরের বন্ধু হিসেবে মাঠে কাজ করতে চাই।

চ্যানেল ওয়ানের ব্যুরো প্রধান মো. শাহনেওয়াজ রিটনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি পিপলস ভিউ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. হুমায়ুন কবির, প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মুস্তফা নঈম, ক্লাবের কার্যকরী সদস্য ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান এবং রফিকুল ইসলাম সেলিম।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের অর্থ সম্পাদক আবুল হাসনাত, কার্যকরী সদস্য আরিচ আহমেদ শাহ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রূপম চক্রবর্তী, ক্রীড়া সম্পাদক রুবেল খান, গ্রন্থাগার সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক হাসান মুকুল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফারুক আবদুল্লাহসহ অন্যান্যরা।