ঢাকা | ডিসেম্বর ৪, ২০২৪ - ৫:৫৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

যে তিন ফ্যাক্টরে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়

  • আপডেট: Sunday, June 9, 2024 - 4:09 am

স্পোর্টস ডেস্ক : টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান নবম আসরের ১৫তম ম্যাচে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকাকে হারিয়ে মিশন শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলংকাকে এই প্রথম হারাল টাইগাররা।

শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে শ্বাসরুশ্বাস ম্যাচে শ্রীলংকাকে ২ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ।

এদিন টস জয়ের পর গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামের উইকেট স্লো থাকায় প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ উইকেটে ১০০ রান করে ভালো পজিশনেই ছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এরপর ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় লংকানরা। একের পর এক উইকেট পতনের কারণে শেষ ৩৫ বলে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪ রানের বেশি করতে পারেনি শ্রীলংকা। দলের হয়ে ২৮ বলে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা।
বাংলাদেশ দলের হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। চার ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। চার ওভারে ২৫ রানে ২ উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। চার ওভারে ২৪ রানে ১ উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব।
১২০ বলে ১২৫ রানের মামুলি স্কোর তাড়া করতে নেমে পাওয়ার প্লের মধ্যেই তিন উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাত্র ২৮ রানে দুই ওপেনার সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম আর ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
দলের এমন কঠিন পরিস্থিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চতুর্থ উইকেটে ৩৮ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন লিটন কুমার দাস ও তাওহিদ হৃদয়। ১১.৩ ওভারে ৩ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৯১ রান। এরপর খেই হারিয়ে ফেলে।
মাত্র ২১ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপের মধ্যে পড়ে যায় টাইগাররা। খেলার এমন অবস্থায় উইকেটে অবিচল ছিলেন সাবেক অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার ব্যাটেই একটু আশা দেখছিল বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য ২ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১১ রান। হাতে ছিল মাত্র ২ উইকেট। ব্যাটিংয়ে ছিলেন ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও পেস বোলার তানজিম হাসান সাকিব।
শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক দাসুন শানাকার করা ইনিংসের ১৯তম ওভারের প্রথম (ফুলটস) বলেই ছক্কা হাঁকান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তখন জয়ের স্বপ্ন আরও জোড়াল হয়।
ওভারের দ্বিতীয় বলে সিঙ্গেল রান নিয়ে প্রান্ত বদল করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তৃতীয় বলে রান নিতে পারেননি তানজিম হাসান। চতুর্থ বলে সিঙ্গেল নিয়ে তিনি প্রান্ত বদল করেন।

জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩ রান। পঞ্চম ডেলিভারিটি ওয়াইড দেন শানাকা। সেই বলে দৌড়ে বাড়তি এক রান আদায় করে নেয় বাংলাদেশ। ওভারের শেষ বলে জয়ের জন্য করতে হতো ১ রান।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মিডঅফে ঠেলে দিয়েই রানের জন্য দৌড় শুরু করেন। সেই বলে দুই রান নিয়ে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দল।
দলের জয়ে ২০ বলে এক চার আর তিন ছক্কায় ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তাওহিদ হৃদয়। ৩৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস।বিশ্বকাপ অভিষেকেই ম্যাচের সেরা হন বাংলাদেশ দলের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।
তাওহীদ হৃদয় সময়ের অন্যতম সেরা লেগস্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার তিন বলে যেভাবে তিন ছয় মারলেন এটা বাংলাদেশের ইনিংসের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি।
যদিও পরের বলেই আউট হয়ে যান হৃদয় তবুও ১২৫ রানের লক্ষ্যে ২০ বলে ৪০ রানের ইনিংস বেশ কার্যকরী।
হৃদয় চলতি বছর বাংলাদেশের সেরা টি-টোয়েন্টি ব্যাটার। যে উইকেটেই ব্যাট করেছেন আত্মবিশ্বাসী লেগেছে তাকে।
অফ ফর্মে থাকা লিটনের সাথে ৬১ রানের জুটি গড়েছেন হৃদয়, লিটন শ্রীলংকার বিপক্ষে এই জয়ে অবদান রেখেছেন, তিনি ৩৮ বলে ৩৬ রান করেছেন।
রিশাদের লেগস্পিন আশীর্বাদ
ম্যাচের একটা সময় শ্রীলংকা ছিল ১৪ ওভারে ১০০ রান তিন উইকেট, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আক্রমণে যাওয়ার জন্য একটা ভালো স্কোরকার্ড।
মাঠে ধারাভাষ্যকাররা মনে করছিলেন শেষ ছয় ওভারে ৫০-৬০ রানের মতো নিয়ে শ্রীলংকা একটা ভালো স্কোর দাঁড় করাবে শেষ পর্যন্ত।
১৫তম ওভারের প্রথম দুই বলেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছেন রিশাদ হোসেন।
মুস্তাফিজ ছিলেন দুর্দান্ত
মুস্তাফিজুর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ থেকেই দুর্দান্ত বল করছিলেন, ডালাসে তিনি স্লোয়ার ও গতিময় বলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।
ঘণ্টায় ১৪৪ কিলোমিটারের বল থেকে শুরু করে ১২০ এর নিচে একদম ধীরগতির কাটারে শ্রীলংকার ব্যাটাররা পরাস্ত হচ্ছিলেন বারবার।
মোট ২৪ বল বোলিং করে ১৪টাই ডট বল দিয়েছেন মুস্তাফিজ, নিয়েছেন ৩ উইকেট।
হতাশ করেছে সাকিব, সৌম্য, শান্ত
সৌম্য সরকার আরও এবার কোনও রান না করেই আউট হয়ে গেছেন, ৯০টিরও কম ইনিংস খেলে তিনি ১৩ বার শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন।
সাকিব আল হাসান এই ম্যাচে প্রথমে বল হাতে ও পরে ব্যাট হাতে হতাশ করেছেন।
পাওয়ারপ্লেতে বল হাতে নিয়ে প্রথম ২ ওভারে দিয়েছিলেন তিনি ২৪ রান, পরে মোট ৩ ওভার বল করে ৩০ রান দিয়েছেন তিনি।
ব্যাট হাতে সাকিব ১৪ বল খেলে নিয়েছেন মাত্র ৮ রান, কখনোই উইকেটে সেট মনে হয়নি তাকে।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর জন্য রানে ফেরার ভালো মঞ্চ ছিল কিন্তু তিনিও ১৩ বলে ৭ রান করে ক্যাচ তুলে দেন।
তবুও বাংলাদেশের সমর্থকদের জন্য এটা একটা স্বস্তির জয়, এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি সমর্থকদের প্রত্যাশা একেবারেই কম।