যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতই সতর্ক থাকতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা
জাগো জনতা অনলাইন।। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, “আমাদের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতোই সতর্ক থাকতে হবে। এ বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কাউকে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দিতে পারি না।”
নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এই নির্দেশনা দিয়েছেন বলে তার দপ্তরেরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই সর্বাধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
“আমাদের একটি কমান্ড সেন্টার বা সদর দপ্তর স্থাপন করতে হবে, যা পুলিশ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে।”
তিনি বলেন, এই নতুন কমান্ড কাঠামো দক্ষতার সঙ্গে দেশের সব পুলিশ স্টেশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করবে।
তুমুল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পালাবদলের পর ২০২৪ সালের ৮ অগাস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
তার আগে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যা লঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সংবাদমাধ্যম সরব হয়ে ওঠে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার এবং পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে ভারতে রাখা নিয়ে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে।
ক্ষমতা হারানোর পর থেকে দলের প্রধানসহ অনেক শীর্ষ নেতাই দেশের বাইরে; দেশে যারা, আছেন আত্মগোপনে; দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ঝুলেছে ডজন ডজন মামলা, গ্রেপ্তার হলেই রিমান্ড; ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্রলীগ এখন ‘নিষিদ্ধ’ সংগঠন।
কোণঠাসা অবস্থায় থাকা আওয়ামী লীগ মাঠের রাজনীতিতে ফেরার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা শেষমেশ কতটা মাঠে গড়াবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাদের কর্মসূচি ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে রেখেছে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক শক্তিও।
কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লিফলেট বিতরণ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গ্রেপ্তারের ঘটনার খবর আসছে।
এমন প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা প্রধানদের যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার অনুগতরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও গুজব ছড়ানোর জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে।
“আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে এই গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।”
তিনি নিরাপত্তা প্রধানদের দেশের সকল নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর যে কোনো হামলা প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
সরকারপ্রধান বলেন, “আমাদের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি আমরা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হই। এ ব্যাপারে আমাদের অত্যন্ত স্বচ্ছ হতে হবে।”
প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন, যাতে রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়।
গণঅভ্যুত্থানের সময় ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির জন্য বাংলাদেশ ইন্টারপোলকে অনুরোধ করার বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক-আইজিপি বাহারুল আলম।
তিনি বলেন, “আমরা অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি, শিগগিরই কিছু সাড়া পাব।”
আইজিপি বলেন, পুলিশ জুলাই-অগাস্টে আন্দোলনে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর চালানো হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতার অভিযোগে দায়ের হওয়া হত্যা মামলাগুলো পর্যবেক্ষণে ১০টি দল গঠন করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এসব মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন এবং নিশ্চিত করতে বলেন যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।
বৈঠকে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাত আলী বলেছেন, রাজধানীতে পুলিশের কঠোর নজরদারির ফলে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে। তিনি বলেন, “আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে”।
প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় নিরাপত্তা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখশ চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি এবং পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ডিএমপি, কোস্ট গার্ড ও বিশেষ শাখার প্রধানরা।