তিন থেকে পাঁচ বছরেই দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানে ভুমিকা রাখবে চট্টগ্রাম বন্দর: মোহাম্মদ সোহায়েল
শেখ দিদার,চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বর্ণদ্বার ও দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল চট্টগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে চবক কনফারেন্স রুমে মতবিনিময় সভায় অংশনেন। এসময় নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে তার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন।
মতবিনিময় কালে চবক চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ অর্জনসহ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রাম বন্দর বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে বদ্ধপরিকর। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী দিকনির্দেশনায়, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশের সমুদ্রপথে বহির্বাণিজ্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।স্মার্ট বন্দরের পথে অনেকদূর এগিয়েছে।
চবক চেয়ারম্যান জানান, দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য চাহিদা, আঞ্চলিক যোগাযোগের ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং বন্দর কেন্দ্রিক উন্নয়ন চিন্তা চট্টগ্রাম বন্দরের গুরুত্ব বাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত।এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান গেটওয়ে হিসেবে কাজ করছে এব্যাপারে সরকারও চট্টগ্রাম বন্দরের ধারাবাহিক উন্নয়নে তৎপর।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের লক্ষ্য এখন আঞ্চলিক পণ্য পরিবহনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া। বর্তমানে বন্দরে ১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানো, ইউরোপের সঙ্গে সরাসরি জাহাজ চলাচল শুরু, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ, বহির্নোঙরের আওতা বৃদ্ধি, ভিটিএমআইএস, ডিজিটালাইজেশন, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের অত্যাধুনিক কি সাইড গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজনের মতো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে বলে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। আশা প্রকাশ করেন আগামী বছরের মধ্যে ১১ মিটারের জাহাজ জেটিত ভেড়ানো সম্ভব হবে আশা করি।
চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান কর্ণফুলী নদীর অববাহিকায় যার অনেক বাঁক আছে এবং এটি প্রাকৃতিক চ্যানেল। বন্দরের কার্যক্রম ধারাবাহিকতা রক্ষায় নিয়মিত ড্রেজিং কাজ চলমান রয়েছে তবে চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের পাশাপাশি পলিথিন এবং অপচনশীল বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, কোভিড মহামারি ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির প্রত্যাশিত গতিকে মন্থর করলেও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে তেমন প্রভাব ফেলেনি বরং কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। জুন মাসে এ বন্দর দিয়ে ৫০ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে, যার ৮৪ শতাংশ তৈরি পোশাক।
সেবা কার্যক্রম নিয়ে চবক চেয়ারম্যান বলেন,বন্দরের কাজ সেবা দেওয়া তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বন্দরে দিন নেই, রাত নেই, এমনকি ছুটির দিন নেই ২৪ ঘণ্টা সাত দিন সচল থাকে।ডিসেম্বরে বন্দরের নতুন কেমিক্যাল শেড চালু করা সম্ভব হবে,নবনির্মিত পিসিটি পরীক্ষামূলক চলছে,বে টার্মিনাল ও ব্রেক ওয়াটারের ডিজাইনের কাজ চলছে যার প্রশস্ত চ্যানেলে ১২-১৩ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ২৪ ঘণ্টা অপারেশন করা সম্ভব হবে। এছাড়াও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের প্রথম জেটি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ১০-১২ হাজার কনটেইনার নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারবে। বড় জাহাজে পণ্য আনা হলে ভোক্তা পর্যায়ে সুবিধা পাবে। এই বন্দর সারা বিশ্বে সমাদৃত এবং বিভিন্ন দেশ ব্যাপক বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছে। আগামী তিন বছরে ৫-৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে আশাকরি। একই সঙ্গে নতুন প্রযুক্তি আসবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো।
সভায় বন্দরের সদস্য মো. শহীদুল আলম, পরিচালক মো. মমিনুর রশিদ, সচিব মো. ওমর ফারুকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।