ইংল্যান্ডের বড় লিড, অ্যাটকিনসনের হ্যাটট্রিক
জাগোজনতা স্পোর্টস : বেসিন রিজার্ভে গতকাল প্রথম দিনের খেলা শেষেই বিষম চাপে ছিল নিউজিল্যান্ড। ২৬ ওভারে ৮৬ রান তুলতে হারিয়েছিল ৫ উইকেট। ভাগ্যিস, আজ দ্বিতীয় দিন সকালে চাপটা বেশিক্ষণ সইতে হয়নি নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের। মাত্র ৪৫ মিনিটে ৫৩ বলের মধ্যে (৮.৫ ওভার) বাকি ৫ উইকেট তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের চাপ থেকে মুক্তি দিয়েছেন ইংল্যান্ডের চার পেসার।
বিশেষ করে গাস অ্যাটকিনসন। আগের দিন ১ উইকেট নেওয়া অ্যাটকিনসন আজ নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৩৫তম ওভারে হ্যাটট্রিক করে মুক্তি দেওয়ার শেষ কাজটা করেছেন। নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ১২৫ রানে অলআউট হওয়ার পর স্রেফ জেঁকে বসেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। ৫ উইকেটে ৩৭৮ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে ইংলিশরা এখন ৫৩৩ রানে এগিয়ে।
ওয়েলিংটনে প্রথম ইনিংসের ব্যাটিংয়ের মেজাজটাই নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরিয়ে এনেছে ইংল্যান্ড। ৫.১২ রান রেটে প্রথম ইনিংসে ২৮০ রান তোলা বেন স্টোকসের দল আজ দ্বিতীয় দিনে ওভারপ্রতি গড়ে ৪.৯৭ রান করে তুলেছে। ‘নড়বড়ে নব্বই’-এ আউট হয়েছেন দুজন। ১ ছক্কা ও ৬ চারে ১১২ বলে ৯২ রানে আউট হন ওপেনার বেন ডাকেট। তিনে নামা জ্যাকব বেথেল ৩ ছক্কা ও ১০ চারে ১১৮ বলে করেন ৯৬ রান। দুটি উইকেটই নিয়েছেন টিম সাউদি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২২০ বলে ১৮৭ রান তোলেন ডাকেট-বেথেল।
আজও দ্রুতলয়ে রান তোলেন ব্রুক
আছে দুটি ফিফটিও। আগের ইনিংসে ১০৬.৯৫ স্ট্রাইকরেটে সেঞ্চুরি পাওয়া হ্যারি ব্রুক তাঁর স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ে ৯০.১৬ স্ট্রাইকরেটে ৬১ বলে ৫৫ করে গ্লেন ফিলিপসের বলে আউট হন। অন্য ফিফটির ইনিংসটি অবশ্য এখনো থামেনি—জো রুটের অপরাজিত ৭৩। তৃতীয় দিনের সকালে তাঁর সঙ্গে নামবেন অধিনায়ক স্টোকস (৩৫*)।
সকালের সেশনে অ্যাটকিনসনের সৌজন্যে ফিরে এসেছে বেসিন রিজার্ভের পুরোনো ইতিহাস। নিউজিল্যান্ডে এটি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের সবচেয়ে পুরোনো মাঠ। এই মাঠে প্রথম টেস্ট হ্যাটট্রিকের কীর্তিটি এখন অ্যাটকিনসনের। টেস্টে ইংল্যান্ডের বোলারদের এটি ১৫তম হ্যাটট্রিক।
নিউজিল্যান্ডের আগের দিনের দুই অপরাজিত টম ব্লান্ডেল ও ‘নাইটওয়াচম্যান’ উইল ও’রুর্কি আজ সকালের সেশনে ব্যাটিংয়ে নেমে টিকেছেন মাত্র ৩.৪ ওভার। ব্লান্ডেলকে বোল্ড করে দিনের প্রথম উইকেটটি নেন ব্রাইডন কার্স। গতকাল কেইন উইলিয়ামসনকে যে ডেলিভারিতে বোল্ড করেছিলেন ঠিক তেমনই নিখুঁত লেংথের ডেলিভারি। পার্থক্য হলো, গতকালের ডেলিভারিটি ছিল ‘নো’, আজকেরটি বৈধ। ঠিক এক বল পরই বেচারা উইল ও’রুর্কিকে সত্যিকার অর্থেই মুক্তি দেন কার্স। ২৫ বল খেলেও রানের মুখ না দেখা এই পেসার রীতিমতো হাঁসফাঁস করছিলেন। ২৬তম ডেলিভারিতে এসে এলবিডব্লু।
বেশিক্ষণ টেকা যাবে না, তা বুঝতে পেরেই হয়তো নাথান স্মিথ ও গ্লেন ফিলিপস ৮ম উইকেটে দ্রুতলয়ে ব্যাট করে ২৭ বলে ২৯ রানের জুটি গড়ে ফেলেছিলেন। কিন্তু তারপর ৩৫তম ওভারে এসে সেই অ্যাটকিনসন ‘শো’।
অ্যাটকিনসনের তৃতীয় ডেলিভারিতে বল ছাড়তে গিয়ে ব্যাটে লাগিয়ে বোল্ড স্মিথ (১৪)। পরের বলে গালিতে ক্যাচ ম্যাট হেনরি। পঞ্চম ডেলিভারিতে বল সাউদির পায়ে লাগিয়েই এলবিডব্লু আউটের উল্লাসে ভোঁ দৌড় দেন অ্যাটকিনসন। ইংল্যান্ড পেসার পেছনে ফিরে তাকানোর আগেই অবশ্য আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার রড টাকার। কিন্তু রিভিউ নেন সাউদি। মজার বিষয় হচ্ছে, রিভিউ নিয়েই ড্রেসিংরুমের দিকে হাঁটা শুরু করেন সাউদি ও নন স্ট্রাইকে থাকা ফিলিপস। ইংল্যান্ড দলও ফিরে যায় ড্রেসিংরুমে। তৃতীয় আম্পায়ার যখন সাউদিকে আউট ঘোষণা করেন তখন মাঠে কেউ ছিল না! ধারাভাষ্যকার ইয়ান স্মিথের বিষয়টি মোটেও ভালো লাগেনি। তাঁর মতে এমন আচরণ খেলার চেতনাবিরোধী। তাঁর প্রশ্ন, ‘আউট হয়েছে বুঝেই তুমি ফিরে যাচ্ছো। তাহলে (ইংল্যান্ডের) উদ্যাপনে দেরি করানো কেন?’
সে যা হোক, তাতে অ্যাটকিনসনের কীর্তি মোটেও ম্লান হয়নি। গত জুলাইয়ে টেস্ট অভিষিক্ত অ্যাটকিনসন ৮ম বোলার হিসেবে টেস্টে ‘পারফেক্ট’ হ্যাটট্রিক (বোল্ড, ক্যাচ, এলবিডব্লু) করলেন। ১১তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে সেঞ্চুরির পাশাপাশি হ্যাটট্রিকও করলেন অ্যাটকিনসন। এ তালিকায় আছেন বাংলাদেশের সোহাগ গাজীও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড: ২৮০ ও ৭৬ ওভারে ৩৭৮/৫ ( বেথেল ৯৬, ডাকেট ৯২, রুট ৭৩*, ব্রুক ৫৫, স্টোকস ৩৫*; সাউদি ২/৭২, হেনরি ২/৭৬, ফিলিপস ১/৭৫)।
নিউজিল্যান্ড: ৩৪.৫ ওভারে ওভারে ১২৫ (উইলিয়ামসন ৩৭, ল্যাথাম ১৭, ব্লান্ডেল ১৬, ফিলিপস ১৬, স্মিথ ১৪; অ্যাটকিনসন ৪/৩১, কার্স ৪/৪৬, স্টোকস ১/২১, ওকস ১/২৬)—দ্বিতীয় দিন শেষে।