ঢাকা | নভেম্বর ২১, ২০২৪ - ১২:১৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

আক্কেলপুরে আলু বীজের কৃত্রিম সংকটে দিশেহারা চাষীরা 

  • আপডেট: Thursday, November 14, 2024 - 5:17 am

জাগো জনতা অনলাইন।।  জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে সিন্ডিকেটের প্রভাবে আলুর বীজের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চাষীদের কাছ থেকে চড়া দাম নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। ফলে আগাম জাতের আলু চাষের মৌসুম শুরু হলেও আলু বীজের চড়া দাম হওয়ায় ইচ্ছে থাকলেও আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

 

তথ্য মতে, আক্কেলপুর উপজেলায় বীজের কৃত্তিম সংকট দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ৪০ কেজি আলু বীজের ২৭শত টাকা বস্তার দাম নেওয়া হচ্ছে ৪ হাজার পাঁচশত টাকা এবং ৩ হাজার টাকার বস্তার দাম নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। ফলে আলু চাষে বড় ধরণের সংকটে পড়তে হবে চাষীদের।

এদিকে, চাষীরা জানায়, দোকানে গেলে আলু বীজ পাওয়া যায় না। কিন্তু রাতের আধাঁরে আলুর বীজের অভাব হয়না। কারণ ওই সময়ে গ্রামে গ্রামে উচ্চ মূল্য আলু বীজ বিক্রি করেন সিন্ডিকেটের সদস্য্যরা। ফলে বর্গা চাষীরা আলু চাষাবাদ নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ বছরে ১ বিঘা বা ২৯ শতাংশ জমি বাবদ ২৫ হাজার টাকা দিতে হয় মালিককে। ফলে বীজের অতিরিক্ত দাম ও জমির মালিককে খরচ দিয়ে তাদের কোন লাভ হবে না বরং বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন বর্গা চাষীরা।

চাষীরা আরও জানান, সরকারী ডিলার পর্য়ায়ে আগাম জাতের আলু বীজের সরবরাহ না থাকায় বাজারে বীজের দাম লাগামহীন হয়েছে। অবস্থা এমন থাকলে এবার মৌসুমি আলু উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রাও ব্যহত হতে পারে। কারন মৌসুমে যে আলু কৃষকের নিকট থেকে ব্যবসায়ীরা ১৫ টাকা করে নিয়েছিল, সেই আলুই রোপন মৌসুমে কৃষকদের নিকটই ৭০-৭৫ দরে বিক্রি করছে। মুলত এটি একটি সিন্ডিকেটের কারসাজি বলে ধারণা করছেন কৃষকরা। তারা চাহিদার তুলনায় কম আলু হিমাগার থেকে বের করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করছে। এসব নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি নেই বলে ভুক্তভোগীরা জানান। এবার উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। তিন ফসলী জমিতে কৃষকরা আগাম আলু রোপণের জন্য আগাম জাতের আমন ধান আবাদ করেছেন। এছাড়া রয়েছে আলু রোপণ পরিচর্জা, কীটনাশক এবং উত্তোলন পর্যন্ত সব মিলিয়ে বিপুল খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। এর পর যদি আবহাওয়া বৈরী হয় এবং মুল্য পতন ঘটে তাহলে কৃষককে পথে বসতে হবে। আগাম জাতের আলু গুলো হচ্ছে ৮৬.৭৯, ডায়মন্ড, ক্যারেজ, শাহিন, কাটিনাল। যা রোপনের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে এসব উত্তোলন করে বোরো ধানের আবাদ করতে পারবে কৃষক। আওলাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ধলটিকর গ্রামের কৃষক একরামুল হক চৌধুরী জানান, “তিনি এবার ৫০ বিঘার অধিক জমিতে আলু চাষ করবেন। তবে এবার বীজের চাহিদা বেশি হওয়ায় সরবরাহ কমে গেছে তাই দামও প্রচুর বেড়ে গিয়েছে।’

অন্যদিকে, বীজ ব্যবসায়ীরা জানান,  ‘আলুর বীজের দাম বাজারে আগের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও আমাদের কিছু করার নেই। কারণ আমাদেরও খরচ বেড়েছে। আমরা কমে নিতে পারলে, কমে দিতে পারবো। সিন্ডিকেট করে কেউ আলু বীজের দাম বাড়ায়নি বরং সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে।

আক্কেলপুর উপজেলার রায়কালী ইউনিয়নের মো. মিজানুর রহমান পলাশ নামে এক সচেতন যুবক জানান, ‘আলু বীজের যেই দাম বেড়েছে তাতে বর্গা চাষীদের পাশাপাশি সব চাষীদের মাথা হাত। তাই সরকারের উচিত এসব সিন্ডিকেট দাম করা। এদের দমন করতে না পারলে দেশের বাজারে এ বছর আলুর দাম অনেক বেশি থাকবে। যার ফলে আলু ক্রয় করার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকবে। আমি নিজ উদ্যোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশিলষ্ট অনেকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছি।’

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা যায়,  বীজ ডিলারদের মাধ্যমে উপজেলায় সরকারী মূল্যে মৌসুমি বীজ সরবরাহ করবে। ষ্টিক জাতের আলু বীজ ৬৫ টাকা কেজি দরে “আগে আসলে আগে পাবে” ভিত্তিতে কৃষক নিতে পারবে। এসব বীজ রোপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে আলু উত্তোলন করা যায়।

বিএডিসির বীজ ডিলাররা জানান, কৃষকের চাহিদা না থাকলে সব ডিলার বীজ উত্তোলন করেনা। ফলে দাম বাড়লে চাহিদাও কমবে। তবে কৃষক চাইলে ডিলাররা সরকারী মুল্যে আলু বীজ দিতে বাধ্য।

আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বীজের দাম বেশি হলেও আলু উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা পুরন হবে বলে তারা আশাবাদী।