ঢাকা | নভেম্বর ২২, ২০২৪ - ৭:০২ অপরাহ্ন

১২৫৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নিশ্চিন্ত বসবাস কানাডায়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে শোকজ আদালতের

  • আপডেট: Monday, September 9, 2024 - 4:50 am

মো. খায়রুল আলম খান : এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা মাহিন এন্টারপ্রাইজের খেলাপি ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে শোকজ করেছেন আদালত। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমানের আদালত এ শোকজ করেন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, মাহিন এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া ঋণের অর্থ আদায়ে পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবি ব্যাংক এর লিগ্যাল অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যান ও এমডি বরাবর সুপারিশ কেন করা হবে না তা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঋণের অর্থ মাহিন এন্টারপ্রাইজ বিদেশে পাচার করেছে কি না তা তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বরাবর পাঠানোর জন্য আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, মাহিন এন্টারপ্রাইজের এক হাজার ২৫৭ কোটি দুই লাখ ১৮ হাজার টাকা খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য এ বি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখা ২০২৪ সালের ২৬ মে অর্থ ঋণ জারি মামলা করে। মামলায় মাহিন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আশিকুর রহমান লস্কর, এআরএল শিপব্রেকিং লিমিটেডে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আতিউর রহমান লস্কর, শামসুন নাহার লস্কর ও রাবেয়া লস্করকে বিবাদী করা হয়। আশিকুর রহমান লস্কর পুরো পরিবার নিয়ে বর্তমানে কানাডার টরন্টোতে বসবাস করছেন বলেও আদালত সূত্র জানিয়েছে।

রবিবার চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালত এ সংক্রান্ত এক আদেশে বলেছেন, নির্দেশিত সময়ের মধ্যে পলাতক ঋণখেলাপিদের বন্ধকি সম্পত্তি অর্থ ঋণ আদালত আইন এর ৩৩(১) ধারায় নিলামে বিক্রির পদক্ষেপ নিতে না পারায় বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ। ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতায় খেলাপি ঋণের বড় অংশই এক পর্যায়ে আদায় অযোগ্য হয়ে পড়ে। এই আদায় অযোগ্য খেলাপি ঋণের ভারে বাংলাদেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক ভিত্তি অত্যন্ত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। এমতাবস্থায় বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ আদায়ে দায়িকগণের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার কারণে এবি ব্যাংকের লিগ্যাল অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রধানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যান ও এমডি বরাবর সুপারিশ কেন করা হবে না, তা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এতে আরও বলা হয়, ঋণখেলাপি দায়িকগণ আদালতের আদেশ লঙ্ঘনপূর্বক দেশত্যাগ করে কানাডার টরন্টোতে বসবাস করায় এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকের ১৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মামলা থাকায় প্রতীয়মান হয় তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। তাই তাদের নেওয়া ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করা হয়েছে কি না তা তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বরাবর প্রেরণ করা হোক। এ মামলার পরবর্তী তারিখ ১৭ সেপ্টেম্বর। ওই দিন এবি ব্যাংকের হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড রিকভারি ডিভিশনের শোকজের জবাব দাখিলের জন্য বলা হয়
আদালত সূত্র জানিয়েছে, মাহিন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আশিকুর রহমান লস্করের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রায় আড়াই হাজার কোটি খেলাপি ঋণ রয়েছে। এসব ঋণ পরিশোধ না করেই কানাডায় পাড়ি জমিয়েছেন তিনি।
এবি ব্যাংক ছাড়াও তার কাছে ঢাকা ব্যাংকের ১৮৫ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১৭৫ কোটি মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১০০ কোটি ফিনিক্স ফাইন্যান্সের ৭২ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৪ কোটি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১৯ কোটি এবং মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১২ কোটি টাকাসহ আরও একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ আটকে আছে।