রোমানিয়ার অদ্ভুত এক বনভূমি, যেখানে কেউ গেলে ফিরে আসে না
খায়রুল আলম খান : রোমানিয়ার ট্রান্সসিলভানিয়ায় অবস্থিত ক্লাজনাপকা শহরে হুইয়া বাছিউ নামক একটি বনভূমি অবস্থিত।
এই বনভূমিতে প্রায়শই ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অতিপ্রাকৃত ঘটনা বনটিকে ভৌতিক ও রহস্যময় করে রেখেছে। সবসমেত প্রায় ২৫০ হেক্টর জায়গার উপর সমগ্র বনভূমিটি দাঁড়িয়ে রয়েছে।
এই জঙ্গলকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গল বলে অভিহিত করা হয়৷ এই জঙ্গলে যারা প্রবেশ করেন তারা নাকি আর কখনও ফিরে আসেন না৷তবে এই তথ্যটি স্থানীয় মানুষদের কেবল একটি ধারণা মাত্র।এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।এই বনের গাছগুলোর আকৃতিও কিছুটা হলেও অস্বাভাবিক।
প্রায় প্রতিটি গাছই অদ্ভুত ধরনের ডালে ডালে প্যাঁচানো।অশরীরী কোনো কিছুর উপস্থিতি, অদ্ভুত ধরনের কিছুর আবির্ভাব, অপরিচিত আলোর বলয় সহ এমন অনেক কিছুরই বর্ণনা পাওয়া যায় এলাকাবাসী এবং বন পরিদর্শনে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে।এই জঙ্গলে এমন এমন সব ঘটনা হয় যে কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা একে ট্রান্সেলভ্যানিয়ার বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল বলে থাকেন।
এই অঞ্চলে ঘুরতে আসা প্রায় সকলের কাছ থেকেই শোনা যায়, তারা বনে থাকার পুরো সময়টা জুড়েই এক ধরনের অস্বাভাবিক মানসিক উদ্বিগ্নতায় ভুগতে থাকেন। শুধু তা-ই নয়, তারা অনুভব করেন, কেউ যেন তাদেরকে প্রতিনিয়ত চোখে চোখে রাখছে। আনুমানিক ১৯৬৮ সালে এই বনটি সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীর কাছে তার রহস্য নিয়ে উপস্থিত হয় এমিল বার্নিয়া নামক এক ব্যক্তির তোলা ফটোগ্রাফির মাধ্যমে।
এই অরণ্যে ভ্রমণের সময় এমিল বার্নিয়া একটি ইউএফও দেখেন বলে দাবি করেন এবং সাথে সাথেই তিনি তা ক্যামেরাবন্দী করে ফেলেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এই ঘটনার কিছুদিন পরেই কিছু জীববিজ্ঞানী সেখানে গিয়ে অনেককিছুই পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন এবং আশেপাশের এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলেন।
এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলেও জানা যায়, তারাও এমন মাঝেমধ্যে গোলাকৃতি তীব্র আলোর বলয় বন থেকে উর্ধ্বাকাশের দিকে যেতে দেখেছেন। ২০০২ সালে সর্বশেষ ইউএফও দেখেছিলেন দু’জন স্থানীয় পর্যটক। তারা এই বনের খুব কাছাকাছি প্রতিবেশী শহরে থাকেন। তারা একথা বলেন সিগারেটের মত লম্বা, প্রায় ৫০ মিটার দীর্ঘ একটি অতি উজ্জ্বল আলোকবস্তু বন থেকে আকাশের দিকে ছুটে যায়। প্রায় ২৫ সেকেন্ডের জন্য তারা বস্তুটিকে দেখতে পেয়েছিলেন।
একথা ওই অঞ্চলে কথিত আছে, একবার এক মেষপালক বেশ কয়েকটি মেষশাবককে ঘাস খাওয়ানোর জন্য এই বনে প্রবেশ করেছিল। আশ্চর্যজনকভাবে তারা আর কখনো ফিরে আসেনি একেবারে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনার পরে অনেকেই এই বনে প্রবেশ করতে এখনো যথেষ্ট পরিমাণ ভয় পায়।
স্থানীয় মানুষদের মাঝে একধরনের ভীতি কাজ করে। তারা মনে করেন একবার এই বনে কেউ গেলে হয়ত আর ফিরে আসবে না কোনোদিন। এতকিছুর পরেও সাহস করে যারা গেছেন তারা মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, বমিভাব, গায়ে ফোস্কা পড়া, আঁচড়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুড়ে যাওয়া সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুবিধার শিকার হয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা অবশ্য পরীক্ষা করে দেখেছেন এই বনে অস্বাভাবিক মাত্রায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, মাইক্রোওয়েভ বিকিরণ ও ইনফ্রারেড বিকিরণ হয়ে থাকে। এছাড়াও এখানে চুম্বকীয় ও তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের বেশ কিছু বিচ্যুতি রয়েছে। বনের ঠিক মাঝখানে এমন একটি জায়গা রয়েছে, যেখানে কখনো কোনো ঘাস বা অন্যান্য কোনো ধরনের উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা যায়নি।
পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এখানকার মাটি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেন, কিন্তু পরীক্ষা করে এমন কোনো পদার্থের উপস্থিতি সেখানে পাওয়া যায়নি, যার কারণে কোনো উদ্ভিদের জন্ম এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা এই জায়গাটিকে ভূতুড়ে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু বলে থাকেন। তাদের ধারণা কোনো অশরীরী কিছু বা অতৃপ্ত আত্মার বাস এ জায়গায়। তবে বিজ্ঞানীরা স্থানীয় মানুষদের এই সমস্ত তথ্য মানতে নারাজ।
বছরের পর বছর যে রহস্যকে আগলে রেখেছে এই বন। আর সেই সঙ্গে এই বনের রহস্য উন্মোচনেও বিজ্ঞানীরা লেগে রয়েছেন দিনের পর দিন। কিন্তু কোনোভাবেই রহস্যের জালটাকে ঠিক ছিন্ন করতে পারছেন না। সকল নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আজও ভৌতিকতার ঘন অন্ধকারে ঢাকা পড়ে রয়েছে ট্রান্সসিলভানিয়ার এই বনটি