ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১০ সমঝোতা স্বাক্ষর
জাগোজনতা ডেস্ক : ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক কৌশল, রেল-যোগাযোগসহ ১০টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। নয়াদিল্লি সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব স্বাক্ষর হয়।
শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। দুই নেতা একান্ত বৈঠকও করেন।
ডিজিটাল অংশীদারত্ব’ এবং ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ অংশীদারত্ব’ বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করবে ভারত এবং বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে দুই যৌথ কার্যক্রমের নথি সই করে বাংলাদেশ।
এ দুটি হলো-বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল অংশীদারত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সবুজ অংশীদারত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ক নথি সই।
নতুন পাঁচটি সমঝোতা স্মারক হলো-বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সুনীল অর্থনীতি এবং সমুদ্র সহযোগিতার বিষয়ে দুদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ভারত মহাসাগরের ওশানোগ্রাফির ওপর যৌথ গবেষণা ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে বাংলাদেশের বিওআরআই ও ভারতের সিএসআইআরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগের ওপর সমঝোতা স্মারক; যৌথ ছোট স্যাটেলাইট প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল স্পেস প্রোমোশন অ্যান্ড অথোরাইজেশন সেন্টারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং ডিফেন্স স্টাফ কলেজের মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক। নবায়নকৃত তিন সমঝোতা স্মারক হলো-মৎস্যসম্পদ সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক।
বৈঠক শেষে উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আসেন। বক্তব্যে দুজনেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে দৃঢ় আখ্যা দিয়ে তার আরও এগিয়ে নিতে জোর দেন।
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে এদিন সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। সকাল ৯টার দিকে রাষ্ট্রপতি ভবনে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ভবনে একটি লাল গালিচা বিছিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা জানান নরেন্দ্র মোদি। এই সময় দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
রাষ্ট্রপতির গার্ড রেজিমেন্টের একটি অশ্বারোহী দল রাষ্ট্রপতি ভবনের গেট থেকে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরকে বেস্টন করে সংবর্ধনাস্থল পর্যন্ত নিয়ে যায়।
ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এই সময় ভারত ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। প্রধানমন্ত্রী গার্ড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রপতি ভবনে আতিথেয়তা গ্রহণ শেষে সকাল ১০টার দিকে রাজঘাটে দেশটির স্বাধীনতা এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার নয়াদিল্লি পৌঁছান শেখ হাসিনা। লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর ভারতে কোনো সরকারপ্রধানের এটিই প্রথম দ্বিপাক্ষিক
সফরের প্রথম দিন কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রির (সিআইআই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় তিনি তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। বলেন, আপনারা (ভারতীয় ব্যবসায়ীরা) বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করেন।
একই দিন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর আবাসস্থলে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পথে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা দূর করতে সংলাপের আহ্বান জানান।
আগামী ২৩ জুন আওয়ামী লীগের হীরক জয়ন্তী উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমসটেকের (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) জন্য একটি নতুন ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান ড. এস. জয়শঙ্কর এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন যে প্রধানমন্ত্রী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে বিমসটেকের পরবর্তী বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।