ঢাকা | নভেম্বর ২১, ২০২৪ - ১০:১৭ অপরাহ্ন

হজ্ব ও আরাফাত দিবসের রোজা

  • আপডেট: Friday, June 14, 2024 - 8:04 pm

জাগোজনতা ডেস্ক : জিলহজ মাসের ৯ তারিখ পবিত্র আরাফাত দিবস। আরাফাহ আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে চেনা, জানা। এটি তওবা করার দিবস, ক্ষমা প্রার্থনা করার দিবস। আরাফাতের ময়দান বিচার দিবসের হাশরের ময়দানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়; যেখানে সমগ্র মানবজাতি একত্রিত হবে সুবিস্তৃত এক ময়দানে।

এবারের হজে সৌদি আরবে অবস্থানকারীদের জন্য সেই দিনটি হলো ১৫ জুন, শনিবার। আর সৌদি আরবের বাইরের দেশে অবস্থানকারীরা সঠিক মতানুযায়ী জিলহজের চাঁদ ওঠা সাপেক্ষে নিজ দেশের সঙ্গে মিলিয়ে ৯ জিলহজ রোজা রাখবেন। বাংলাদেশে সেই দিনটি হলো রোববার। অর্থাৎ শনিবার শেষরাতে সেহরি খেয়ে রোববার রোজা রাখলে আরাফাতের দিবসের রোজা রাখার বিশেষ সওয়াব পাওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।

আরাফাতের দিবস নির্দিষ্ট করা নিয়ে দুটি মত লক্ষ করা যায়। প্রথমটি হলো, স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখে তারিখ নির্ধারণ করা; দ্বিতীয়টি হলো, সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করা। আরাফাত দিবসের রোজা রাখা। যারা সৌদি আরবের তারিখের অনুসরণ করতে বলেন, তাদের যুক্তি হলো- আরাফাতের রোজার ফজিলত সংক্রান্ত হাদিসে নবীজি (সা.) কোনো তারিখ উল্লেখ করেননি, বরং নির্দিষ্ট একটি বিশেষ দিনের উল্লেখ করেছেন; আর সেই দিনটি হলো হজের দিন, যে দিন হাজিরা আরাফাত ময়দানে অবস্থান করেন। সুতরাং ৮ বা ৯ তারিখ নয় বরং হজের দিনই রোজা রাখতে হবে। হজ যেহেতু পৃথিবীতে শুধুমাত্র এক জায়গায় মক্কাতেই অনুষ্ঠিত হয়, তাই সারা পৃথিবীতে সেই হজের দিনই আরাফাত দিবসের রোজা পালিত হবে। কারণ এই রোজাটি তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, বরং স্থান ও কর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আর তা হলো মক্কা ও হজ।

কিন্তু প্রথম মতের প্রবক্তারা বলেন, সৌদি আরবের অনুসরণ নয়, বরং পৃথিবীর যেখানে যখন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ হবে সেখানকার অধিবাসীদের জন্য সেদিনই আরাফাত দিবস অর্থাৎ ‘ইয়াওমুল আরাফাহ’। যেমন- জিলহজ মাসের ৮ তারিখকে ইয়াওমুত তারবিয়াহ এবং ১০ তারিখকে ইয়াওমুন নাহার (কোরবানির দিন) বলা হয়। অনুরূপভাবে ৯ তারিখ হলো ইয়াওমুল আরাফাহ বা আরাফাতের দিন। তাছাড়া মুসলিম শরিফের হাদিসে আরাফাত দিবসের রোজা বলতে ৯ জিলহজের কথা বলা হয়েছে, তারিখের কথাটি অন্য হাদিসেও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জনৈকা স্ত্রী বর্ণনা করেন যে, ‘নবীজি (সা.) ৯ জিলহজ তারিখে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ: ২৪৩৭, নাসায়ি: ২৩৭২)

তাদের মতে, যুক্তিও একই কথাই বলে। যেমন- পৃথিবীর অনেক দেশে আরবের একদিন আগেও চাঁদ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে যেদিন আরবের ৯ তারিখ, ওই দিন সেসব দেশে ১০ জিলহজ তথা ঈদুল আজহা। তাদের আরবের সঙ্গে আরাফাহর রোজা রাখতে হলে ঈদের দিন রোজা রাখতে হবে। অথচ হাদিসে ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম করা হয়েছে। এছাড়াও যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইসলাম শুধু একবিংশ শতাব্দীর যোগাযোগ মাধ্যমের সহজলভ্যতার ধর্মই নয়, বরং সব যুগের সব মানুষের ধর্ম। সেক্ষেত্রে যারা কোনো কারণে যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে, তারা কীভাবে আরবের আরাফাত দিবস জানতে পারবে? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।

সমাধানের কথা হচ্ছে, যুক্তিতর্কে না গিয়ে নিরাপদ পদ্ধতি হিসেবে সাধারণ মুসলমানদের টানা দুইদিন রোজা রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক ইসলামিক স্কলার। তারা বলেন, নিজ দেশের তারিখ অনুযায়ী মক্কার আরাফাত দিবসের দিন মিলিয়ে দুটি রোজা রাখা উত্তম। এতে আরাফাত দিবসের রোজা আদায় হবে, আবার দুই রোজার সওয়াবও পাওয়া যাবে।