ঢাকা | নভেম্বর ২২, ২০২৪ - ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

মিরসরাইয়ে মাহে রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ে বেকায়দায় সাধারণ মানুষ

  • আপডেট: Wednesday, March 13, 2024 - 7:46 am
মিরসরাই প্রতিনিধি : এ.এইচ. সেলিম।। 
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে মানুষ। গত বছরের তুলনায় এবার ছোলা, খেজুরসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এখনো রমজানের বাজার করতে পারেননি অনেকে। উপেজলার বিভিন্ন এলাকার অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
রমজানে নিত্যপণ্যের বাজারের চাহিদাকে পুঁজি করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ক্রেতাদের পকেট কাটতে ব্যস্ত থাকেন। রমজানে বাড়তি মূল্যের কারণে বিপাকে পড়েন সীমিত আয়ের মানুষ। রমজানের অত্যাবশ্যকীয় প্রতিটি পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর ছোলার আমদানি ব্যয় বেড়েছে। গত বছর ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ ছোলা আসে। পুরো বাজার ভারতীয় ছোলায় সয়লাব ছিল। এছাড়া উচ্চ শুল্কের কারণে খেঁজুরের বাজারও লাগামহীন।
অপরদিকে চাল, ডাল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও চিড়ার বাজারও বাড়তি। মাছ-মাংস ও মুরগির বাজারেও একই অবস্থা। বাজারে ৫০-৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। এর মধ্যে নতুন করে বাড়ছে আলুর দাম। বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
উপজেলার কাটাছরা এলাকার সিরাজুল ইসলাম মানিক নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, রমজান মাসকে সংযমের মাস বলা হয়। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে এই মাসটি টাকা উপার্জনের জন্য খুবই ভালো একটি মাস। মুসলিম সম্প্রদায়ের রমজান ছাড়াও ঈদের জামা-কাপড়সহ আনুষাঙ্গিক খরচ রয়েছে। এতে এই মাসে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। অন্তত রমজান মাসে হলেও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত।
৮ নং পূর্ব দূর্গাপুর  এলাকার ফারুক হোসেন  বলেন, প্রথম  রমজান শেষ হয়ে গেলেও , এখনো বাজার করতে পারিনি। জিনিস পত্রের যে পরিমাণ দাম বেড়েছে, এতে আমাদের মতো শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে খেয়ে পরে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য।
উপজেলার বড়দারোগাহাট, বারইয়ারহাট, বড়তাকিয়া, জোরারগঞ্জ, মিঠাছরা , আবুতোরাবসহ কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকায়। অথচ গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকায়। সাদা মোটর কেজি ৮০ টাকা, মশুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, খেসারি ডালের কেজি ১৪০ টাকা। চিড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। গত বছর দাম ছিল ৫০ টাকা। সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৯ টাকা ও খেজুর মানভেদে ২৯০ টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত বছর ১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে খেজুর পাওয়া যেত।
অপরদিকে বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা, গরুর মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাঙ্গাস মাছ ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা এবং রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
ঠাকুরদিঘী  বাজারের ব্যবসায়ী নুর হোসেন  বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। কোনো ব্যবসায়ীতো আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবেন না।
তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কেনেন। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাস ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই।
দামের ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে শান্তির হাট  বাজারের খুচরা বিক্রেতা ইমাম হোসেন  বলেন, আমরা পাইকারি বাজার থেকে দু’এক বস্তা পণ্য এনে বিক্রি করি। ক্রয়মূল্যের তুলনায় কেজিতে ১-২ টাকা লাভ করে পণ্য বিক্রি করে থাকি। এখন প্রতিযোগিতামূলক বাজার, কোনো খুচরা দোকানদার চাইলেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না। কারণ ক্রেতারা এখন বেশি সচেতন।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থাপনার প্রতি পদে পদে রয়েছে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। এসব সিন্ডিকেট সরকারকেও জিম্মি করে ফেলে। প্রশাসন অভিযান চালাতে গেলে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে পালিয়ে যান। রমজান মাসে পর্যাপ্ত পণ্য আমদানি হওয়ার পরও দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এছাড়া অনেক ব্যবসায়ীর দোকান ও গুদামে গত বছরের অবিক্রিত পণ্যও রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, দু’একদিনের মধ্যে বাজার মনিটরিং করবো। পণ্য ক্রয়ের রশিদ দেখবো ব্যবসায়ীদের কাছে। অতিরিক্ত দামে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা করা হবে।