মোদি’র যুক্তরাষ্ট্র সফর: মূল আলোচনায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
মোঃ খায়রুল আলম খানঃ যুক্তরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের বিষয়টি। একই সঙ্গে এই সফরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা, সেমিকন্ডাক্টর এবং খনিজ সম্পদ নিয়ে বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর করা হয়। আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমেই গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে মোদি’র যুক্তরাষ্ট্র সফরের সংবাদ।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ খবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর । ভারতের সঙ্গে একাধিক চুক্তি স্বাক্ষর, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশ্বাস, গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা, এসব খবর যেমন আছে, তেমনই গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিদরা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলিও। আবার মোদীর সফরকালে যেসব প্রতিবাদ হয়েছে, তাও জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলো। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের বাজার এবং চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারতকে পাশে পাওয়ার প্রয়োজনীয়তা থেকেই সামরিক, বেসামরিক, গবেষণা ইত্যাদি নিয়ে যেমন চুক্তি হয়েছে, তেমনই নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে ভারতে যেভাবে ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপরে নির্যাতন বেড়েছে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিরিখে অনেকটা পিছিয়ে গেছে ভারত, সেইসব প্রশ্ন বেসরকারি মহল এবং রাজনীতিবিদদের তুলতে বাধাও দেয় নি মার্কিন প্রশাসন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে গত নয় বছরে যিনি কোনও সাংবাদিককে প্রশ্ন করার সুযোগই দেন নি, সেই নরেন্দ্র মোদীকে এবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ২০১৬ সালে একবার মাত্র তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, কিন্তু সেখানেও কারও কোনও প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, বিমানে ওঠার আগে পর্যন্তও নরেন্দ্র মোদী সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনের কারণেই তাকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক সাবরিনা সিদ্দিকি প্রশ্ন করেন, মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার উন্নত করতে এবং ভারতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কি কি পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
এ প্রশ্নের জবাবটা একটু কৗশলী ভঙ্গিতে দেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি শুরুই করেন এইভাবে: ‘আমি অবাক হচ্ছি এটা শুনে যে আপনি বলছেন লোকে বলে’… না ভারত আসলেই একটি গণতন্ত্রিক দেশ। প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেমন বলছিলেন, ‘ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেরই ডিএনএতে গণতন্ত্র আছে।’ ভারতে জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্যের কোনও স্থান নেই বলেও দাবি করেন নরেন্দ্র মোদি।
অন্যদিকে, ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেকপ্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। নরেন্দ্র মোদী যখন রাষ্ট্রীয় অতিথির সম্মান পেয়ে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছেন বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নানা চুক্তি চূড়ান্ত করছেন, সেই সময়েই বারাক ওবামা এই প্রশ্ন তোলেন।
সিএনএনের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা ক্রিশ্চিয়ান আমানপুরকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বারাক ওবামা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা হলে তিনি কোন প্রসঙ্গ উত্থাপন করতেন? ওবামা বলেন, ‘হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে মুসলমানদের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হতো। আমার সঙ্গে যদি নরেন্দ্র মোদির কথা হতো তাহলে আমি বলতাম যে আপনি যদি সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত না রাখতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে বিভাজন আরও বাড়বে। এটা ভারতের স্বার্থের বিপরীতেই যাবে।’