জাবি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নেপথ্যে ৩১০ কোটি টাকার টেন্ডার
সাভার থেকে এইচ এম সাগর: অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের ৩১০ কোটি টাকার টেন্ডারের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের বিরুদ্ধে হল কমিটি না দেয়া, কর্মীদের খোঁজ-খবর না রাখাসহ একাধিক অভিযোগ তুলে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে বিক্ষোভ করেছে শাখা ছাত্রলীগের এক পক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এই কোন্দলের নেপথ্যে মূলত প্রকল্পের ৩১০ কোটি টাকার টেন্ডারের সম্পর্ক রয়েছে।
বিদ্রোহী অংশের নের্তৃত্বে রয়েছেন, শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জাহিদুজ্জামান শাকিল, ফয়সাল খান রকি, সাজ্জাদ শোয়াইব চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেলিন মাহবুব, আরাফাত ইসলাম বিজয়, সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার ও অর্থ সম্পাদক তৌহিদুল আলম তাকিদ। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে তৃতীয় ধাপের জীববিজ্ঞান অনুষদ, কলা ও মানবিকী অনুষদ, গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং ১০ তলা বিশিষ্ট নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এসব ভবনের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩১০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এসব কাজের ওয়ার্ক ওয়ার্ডার চলে আসবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, শাখা ছাত্রলীগের ছয়-সাত জন নেতা আমাদের কাছে নিয়মিত এসে নিজেদেরকে শাখা ছাত্রলীগের মূল অংশ বলে দাবি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নির্বিঘ্নে চালাতে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এছাড়াও তাদের মধ্যে থাকা একাধিক নেতা এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিকাদারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে নানা সময়ে চাঁদা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান একাধিক প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর চাঁদা দাবি করে নির্মানাধীন গ্রন্থাগার ও আল-বেরুনী হল সংলগ্ন খেলার মাঠ সংস্কারের কাজ বন্ধ করে দেয় আল-বেরুনী হল, শহীদ সালাম বরকত হল, আ. ফ. ম. কামাল উদ্দিন হলের নেতাকর্মীরা। এই কাজে নের্তৃত্ব দেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মো. এনামুল হক এনাম, মাসুফ আহমেদ, মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, জাহিদুজ্জামান শাকিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরাফাত ইসলাম বিজয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক চিন্ময় সরকার। এছাড়াও একই বছরের আগস্টে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেলিন মাহবুব ও দেলোয়ার হোসেনের নের্তৃত্বে চাঁদা দাবি করে নির্মাণাধীন স্পোর্টস কমপ্লেক্সের কাজ বন্ধ করে দেয় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাখা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি বলেন, ‘হল কমিটি না দেওয়ায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপর পদ প্রত্যাশীদের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি এই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। এছাড়াও সিনিয়র নেতারা দীর্ঘদিন ধরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে তাদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করে আসছে। উন্নয়ন প্রকল্পের নতুন টেন্ডার হওয়ার পরপরই মূলত এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।’
‘বিদ্রোহী’ গ্রুপের নেতা চিন্ময় সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার নিয়ে আমি কিছু জানিনা। আমরা সাংগঠনিক ভাবে সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক আমাদের কথা রাখেননি। অনেকবার বলেও কমিটি দিতে পারেননি। ফলে নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে অবাঞ্ছিত করেছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে।’
এদিকে কেন ছাত্রলীগ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ এ বিষয়ে জানতে চাইলে, জাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন জানান,” আমার কিছু দোষ রয়েছে, তবে সেটি সংগঠনকে গতিশীল করতে আমি অনেককেই গালমন্দ করেছি। কিন্তু এটা আমার স্বার্থে না বরং সংগঠনকে ভাল রাখতে। আপনারা জানেন আমাদের কমিটি টা সিন্ডিকেটের বাইরে ছাত্রলীগের শত প্রাণের দাবিতে একটি সুসংগঠিত কমিটি বলে আজকের এমন ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র আর আজকে যারা বিদ্রোহ করেছে তাদের সম্বন্ধে আপনারা ভাল জানেন। আমি সেন্ট্রালকে জানিয়েছি এবং বলেছি আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে সত্যতা যাচাই করতে পারেন”।
এবিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, “যেকোন মূল্যে ক্যাম্পাসকে স্হিতিশীল রাখা হবে। আমরা সেন্ট্রালের পরামর্শে সকল সিদ্ধান্ত নিব”।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন পকল্পের পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘টেন্ডার হয়েছে। ওয়ার্ক ওয়ার্ডার আসতে আরও মাসখানেক সময় লাগবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, প্রকল্প অফিসে কারা চাঁদা দাবি করেছে এ বিষয়ে আমি জানিনা। আমি খোঁজ নিচ্ছি। যদি এমন হয়ে থাকে তবে আমি অবশ্যয়ই ব্যবস্থা নিব।