মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘সইং নৃত্য’
কাপ্তাই (রাঙামাটি) প্রতিনিধি।
মারমা সম্প্রদায়ের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নৃত্য হলো ‘সইং নৃত্য’। মূলত বৌদ্ধ ভিক্ষুদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় প্রয়াত ভিক্ষুর মরদেহ বা কফিন ঘিরে এই নৃত্য পরিবেশন করা হয়। নৃত্য ও গানের মাধ্যমে প্রয়াত ব্যক্তির কর্মজীবন, জীবনাচরণ এবং সমাজে তাঁর অবদান তুলে ধরা হয়। এ নৃত্যের সঙ্গে ঐতিহাসিক গীতিনাট্য ‘জ্যাত ও পাংখুং’ পরিবেশিত হয়, যা পুরো অনুষ্ঠানকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলে।
সইং নৃত্যের মাধ্যমে প্রয়াত ব্যক্তির স্মৃতিচারণ ও সমাজের প্রতি তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজিত এসব অনুষ্ঠানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন কালচারাল অফিসার এবং জনপ্রিয় বেতার ও টিভি সংগীতশিল্পী চথুইপ্রু মারমা বলেন, সইং নৃত্য মূলত মারমা সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ ভিক্ষু কিংবা প্রবীণ ব্যক্তির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা হয়। তিনি জানান, বৌদ্ধধর্মের কোনো গুরু মারা গেলে তাঁর কফিন কাঁধে নিয়ে একটি রাজপ্রাসাদতুল্য কাঠামোর ভেতরে দিয়ে নৃত্য পরিবেশন করা হয়, যাকে সইং নৃত্য বলা হয়। মারমা ভাষায় একে ‘তালা আকাও’ বলা হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ধর্মীয় গুরু ছাড়াও সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ ও সম্মানিত ব্যক্তির মৃত্যুতেও এই নৃত্য পরিবেশন করা হয়। শুধু ভান্তেদের নয়, সমাজের প্রবীণ ও গুরুজনদের সম্মান জানাতেও সইং নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। ধর্মীয় গুরু হলে তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনগাথা গানের মাধ্যমে বর্ণনা করে নাচ পরিবেশন করা হয়। তবে বর্তমানে কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নধর্মী গান ব্যবহৃত হচ্ছে, যা মারমা সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মংসুইপ্রু মারমা বলেন, মারমা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মৃত্যুর পর নির্বাণের পথে যাত্রা করেন। তাঁদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় দায়ক-দায়িকারা সইং নৃত্যের মাধ্যমে সেই শেষ যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখেন। একটি সইং নৃত্য দলে সাধারণত ২০ থেকে ৫০ জন সদস্য অংশগ্রহণ করেন।
কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়নের নৃত্যশিল্পী সান্দাউই, এ্যাসাইউ, মিখ্যাইচিং, হ্লামেসিং, থুইনাইং, থুইহাইংনুং ও উম্যানুং মারমা জানান, প্রয়াত বহু ভান্তের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে তারা সইং নৃত্যে অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।











