ব্যালন ডি’অর পাওয়ার র্যাঙ্কিং: শীর্ষে কেইন, তালিকায় মেসি, নেই রোনালদো
স্পোর্টস ডেস্ক।। লিওনেল মেসি ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক দ্বৈরথ এখন কার্যত অতীত। প্রায় দুই দশক ধরে ব্যালন ডি’অর মানেই ছিল এই দুই মহাতারকার আধিপত্য। তবে ২০২৬ সালের ব্যালন ডি’অর দৌড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই চিত্র বদলে যেতে শুরু করেছে। এবার প্রথমবারের মতো গোল্ডেন বলের লড়াইকে এতটা উন্মুক্ত, অনিশ্চিত ও বহুমুখী মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
২০২৫ সালে প্যারিস সাঁ-জার্মাঁকে তাদের ইতিহাসের প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ জেতাতে অসাধারণ ভূমিকা রেখে ব্যালন ডি’অর জিতে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসেন উসমান দেম্বেলে। ক্যারিয়ারের নানা উত্থান-পতনের পর ওই মৌসুমে ধারাবাহিক ও প্রভাবশালী পারফরম্যান্সই তাকে ফুটবলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্বীকৃতিতে পৌঁছে দেয়। তবে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ২০২৬ সালের দৌড়ে দেম্বেলে আর এককভাবে এগিয়ে নেই। বরং একাধিক তারকা ফুটবলারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এবারও ব্যালন ডি’অর নির্ধারণে চ্যাম্পিয়নস লিগ বড় ভূমিকা রাখবে। তবে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠেছে, কারণ ২০২৬ সাল বিশ্বকাপের বছর। উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিতব্য ফিফা বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স ব্যালন ডি’অরের ভাগ্য নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে গ্রীষ্মের আগে পর্যন্ত সম্ভাব্য বিজয়ীর নাম নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন।
এদিকে ডিসেম্বরের শেষ দিকে শুরু হয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে আফ্রিকা কাপ অব নেশনস। এই টুর্নামেন্ট আফ্রিকান ফুটবলারদের জন্য বাড়তি সুযোগ তৈরি করবে। ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে বড় মঞ্চে আলো ছড়াতে পারলে ব্যালন ডি’অর দৌড়ে তাদের অবস্থান আরও শক্ত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যালন ডি’অরের লড়াই কোনো স্বল্পমেয়াদি প্রতিযোগিতা নয়- এটি একটি দীর্ঘ ম্যারাথন। ২০২৪-২৫ মৌসুমের মাঝামাঝি সময়েও উসমান দেম্বেলে সম্ভাব্য বিজয়ী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন না। কিন্তু মৌসুমের শেষ ভাগে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই তাকে শীর্ষে পৌঁছে দেয়। তাই চলতি মৌসুমের মাঝপথে থাকা এই র্যাঙ্কিং চূড়ান্ত কিছু নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর শীতকালীন বিরতির সময় মৌসুমের অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। এই পর্যায়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে, আর্লিং হালান্ড ও হ্যারি কেইনের মতো তারকারা নিজেদের পারফরম্যান্স দিয়ে নজর কাড়ছেন। ধারাবাহিক গোল, গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে প্রভাব এবং শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা- সব মিলিয়ে ব্যালন ডি’অর দৌড় ক্রমেই আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠছে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম গোলডটকম ফুটবলারদের ক্লাব ও আন্তর্জাতিক পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করেছে ২০২৬ ব্যালন ডি’অর পাওয়ার র্যাঙ্কিং। ১০ জনের এই তালিকায় জায়গা পেয়েছেন সর্বাধিক আটবার ব্যালন ডি’অর জয়ী লিওনেল মেসি। তবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো- এবারের পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ে জায়গা হয়নি তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর।
গোল ও সামগ্রিক পারফরম্যান্সের বিচারে এই র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে রয়েছেন বায়ার্ন মিউনিখের ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন। চলতি মৌসুমে তিনি ইতোমধ্যে ৩৫ গোল করেছেন এবং সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও তিনটি গোল। পাশাপাশি মৌসুমের শুরুতেই জিতেছেন সুপারকাপ, যা তার অবস্থান আরও শক্ত করেছে।
দ্বিতীয় স্থানে আছেন ম্যানচেস্টার সিটির নরওয়েজিয়ান গোলমেশিন আর্লিং হালান্ড। তিনি এখন পর্যন্ত ৩৮ গোল করার পাশাপাশি ছয়টি গোলে সহায়তা করেছেন। প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগসহ সম্ভাব্য সব শিরোপার দৌড়ে রয়েছে তার দল।
তৃতীয় স্থানে রয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। চলতি মৌসুমে তিনি ৩৮ গোলের সঙ্গে আটটি গোলে সহায়তা করেছেন। ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সব শিরোপার লড়াইয়ে থাকায় ব্যালন ডি’অর দৌড়েও তিনি অন্যতম শক্ত দাবিদার।
চতুর্থ স্থানে জায়গা করে নিয়েছেন বার্সেলোনার বিস্ময় বালক লামিন ইয়ামাল। তরুণ বয়সেই তিনি ১০ গোল ও ১৪ অ্যাসিস্ট করে দলের আক্রমণভাগে বড় প্রভাব রাখছেন এবং শিরোপা দৌড়ে বার্সেলোনার গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হয়ে উঠেছেন।
পঞ্চম স্থানে আছেন আর্সেনালের ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেক্লান রাইস। মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তিনি তিন গোল করেছেন এবং আট গোলে সহায়তা দিয়ে দলের ভারসাম্যে বড় ভূমিকা রাখছেন।
ষষ্ঠ থেকে দশম স্থানে রয়েছেন যথাক্রমে পিএসজির পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ভিতিনহা, বায়ার্ন মিউনিখের ফরাসি মিডফিল্ডার মাইকেল ওলিস, লিভারপুল ছেড়ে বায়ার্নে যোগ দেয়া কলম্বিয়ান ফরোয়ার্ড লুইস দিয়াজ, আর্জেন্টিনা ও ইন্টার মায়ামির তারকা লিওনেল মেসি এবং পিএসজির মরক্কোর তারকা ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমি।
আগামী মাসগুলোতে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবলের বড় মঞ্চে পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করেই বদলাতে থাকবে এই পাওয়ার র্যাঙ্কিং। সেই সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিষ্কার হবে- শেষ পর্যন্ত কার হাতেই উঠতে যাচ্ছে ২০২৬ সালের বহুল আলোচিত ব্যালন ডি’অর।











