জালালাবাদ বেড়িবাঁধের একাংশ দখলের কথা স্বীকার: লোকজনের ভোগান্তি
ঈদগাঁও প্রতিনিধি, কক্সবাজার।
কক্সবাজার জেলার ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ দখল করে ব্যক্তিগত বসতভিটার সঙ্গে একাকার করে ফেলা হয়েছে। ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব লারাবাকে এ ঘটনা ঘটেছে। এতে দখলকারীদের বসতভিটা সম্প্রসারিত হলেও ঐতিহ্যবাহী ঈদগাঁও খালের বারোটা বাজার হুমকির মুখে পড়েছে।
এ অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে দু’জনের বিরুদ্ধে উঠলেও, তাদের দেখাদেখি আরও অনেকে বেড়িবাঁধ কেটে বসতভিটার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এ কার্যক্রম চললেও এলাকার কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহত্তর ঈদগাঁওয়ের মধ্যে স্পর্শকাতর ও বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে পূর্ব লারাবাক। স্থানীয় জনসাধারণের সুবিধার্থে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড উক্ত গ্রামের খালপাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেয়। এই বেড়িবাঁধ দিয়েই লোকজন ও যানবাহন চলাচল করে থাকে।
সম্প্রতি কয়েকজন ব্যক্তি তাদের বাড়িভিটার সঙ্গে লাগোয়া উক্ত স্পর্শকাতর বেড়িবাঁধ কেটে ফেলে এবং বসতভিটার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। তারা মাটি কেটে ওয়াবদার গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এর মাধ্যমে তারা খালের এলাকা নিজেদের বসতভিটার সঙ্গে যুক্ত করে ফেলেছে। বসতভিটার আকার বাড়াতে তারা এ জনস্বার্থবিরোধী হীন কাজ করে যাচ্ছে।
অথচ বেড়িবাঁধ দিয়ে মিয়াজী পাড়া, দক্ষিণ লরাবাক, খামার পাড়া ও ফরাজী পাড়ার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। দীর্ঘদিন ধরে এটি তাদের চলাচলের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বেড়িবাঁধের অংশবিশেষ কেটে বসতভিটার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলায় লোকজন, রিকশা ও অটোটেম্পু চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় বেড়েছে বন্যা ঝুঁকি। আবার নদীর সিকস্তি জায়গা মাথাঘিলা হিসেবে দখল করে নিজেদের বসতবাড়ির জমির সীমানা সম্প্রসারণ করা হয়েছে।
খালের বেড়িবাঁধের জমি ও নদীর সিকস্তি জায়গা দখল করে বেড়িবাঁধের গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে অভিযুক্তদের বসতভিটা সম্প্রসারিত হলেও এলাকাবাসী চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয় সচেতন বাসিন্দা বোরহান উদ্দিন জানান, এভাবে বেড়িবাঁধ দখল অব্যাহত থাকলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বন্যা ঝুঁকি তীব্রভাবে বাড়বে। লোকজন ও যান চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হবে। দেখাদেখি অন্যরাও নদীর জায়গা দখলে উৎসাহী হবে। খালের আয়তন কমে যাওয়ায় বন্যা ও বৃষ্টির পানি ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এতে বেড়িবাঁধ ব্যবহারকারী জনগণ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়িবাঁধও নষ্ট হয়ে যাবে। অভিযুক্তরা বেড়িবাঁধের অংশবিশেষ কাটতে গিয়ে ৭–৮ বছর বয়সী প্রায় ২০টির মতো ইউক্যালিপটাস গাছ কেটে ফেলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেড়িবাঁধ-সংলগ্ন এলাকায় শতাধিক পরিবার বসবাস করে আসছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জালালাবাদ ইউনিয়নের পুরো এলাকা ছাড়াও চৌফলদণ্ডী ইউনিয়ন বন্যা ও ঝড়ের পানিতে টইটুম্বুর হয়ে উঠতে পারে। ফলে এসব ইউনিয়নের লোকজনকে একপ্রকার পানিবন্দী জীবনযাপন করতে হবে।
এ বিষয়ে আশু প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ না হলে অনেকে বিষয়টিকে স্বাভাবিক মনে করে নদীর জমি দখল অব্যাহত রাখবে। অন্যদিকে বিলম্ব হলে দখলের আলামতও নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এলাকার ৫০ বছর বয়সী আবু তাহের জানান, ঘটনা সম্পূর্ণ সত্য হলেও আমরা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না। অভিযুক্ত একজনের নিকট আত্মীয় আবছারও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের একাংশ দখল করায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের একটি খুঁটি অভিযুক্তের বসতভিটার ভেতরে চলে গেছে। টিনের বেড়া দিয়ে বেড়িবাঁধ দখল করা হয়েছে এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে এলাকাবাসীকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হয়েছে। প্রস্থে ৬ ফুট ও দৈর্ঘ্যে ৫০ ফুট জায়গা দখল করে বেড়িবাঁধকে বসতভিটার সঙ্গে একাকার করা হয়েছে।
এলাকা ঘুরে জানা গেছে, নদীর সিকস্তি জায়গা অনেকেই মাথাঘিলা হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। অথচ বিধিমতে খালের আকার কমানোর অধিকার কারও নেই।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, মোহাম্মদ শফি আলম নিজের ভিটির সঙ্গে বেড়িবাঁধের একাংশ দখল করেছেন এবং সিরাজুল ইসলাম বেড়িবাঁধের পথ পরিবর্তন করে নদীর গতিপথই বদলে ফেলেছেন।
অভিযোগ ওঠা মোহাম্মদ শফির ছেলে মো. ফিরদাউস প্রকাশ ফিরোজ বেড়িবাঁধের একাংশ দখলের কথা স্বীকার করে বলেন, প্রয়োজনে আইনের লোকজনের মাধ্যমে অথবা সমাজের সচেতন ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ অনুযায়ী দখল ছেড়ে দিতে হলে আমরা তা ছেড়ে দিতে রাজি আছি।
অপর অভিযুক্ত সিরাজুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনি গাড়িতে আছেন এবং শফির ছেলের সঙ্গে কথা বলে পুরো বিষয়টি এই প্রতিনিধিকে জানাবেন। তিনি আরও বলেন, বেড়িবাঁধ দখল ও নদীর গতিপথ পরিবর্তনে অভিযোগকারী টিপুর কোনো ক্ষতির বিষয় নেই।











