রাঙামাটি রাজস্থলীতে পাহাড়ি এলাকায় জমে উঠেছে শীতের পিঠা বিক্রি
মো. সুমন খান, রাজস্থলী।
রাঙামাটি জেলার রাজস্থলী উপজেলার গ্রামাঞ্চল ও বাজার এলাকায় জমে উঠেছে ভাপা ও চিতই পিঠা বিক্রি। পিঠা-পুলির দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে নানান জাতের পিঠাপুলি তৈরি হয়। বিশেষ করে শীত মৌসুমে গ্রামগঞ্জে পিঠা তৈরির ধুম পড়ে যায়। পিঠা শুধু লোকজ খাবার নয়, এর সঙ্গে মিশে আছে আবহমান বাংলার সংস্কৃতি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পারিবারিক ও সমাজজীবন থেকে পিঠা তৈরির আয়োজন কমে যাচ্ছে। তবে এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে একশ্রেণির মৌসুমি নারী-পুরুষ ব্যবসায়ী।
সকালের কুয়াশা কিংবা সন্ধ্যার হিমেল বাতাসে ভাপা পিঠা ও চিতই পিঠা শীতের আমেজকে বাড়িয়ে তোলে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার রাজস্থলী বাজার, হ্নারামুখপাড়া, বাঙ্গালহালিয়া মোড়সহ অলি-গলিতে রাস্তার ফুটপাতে ও মোড়ে মোড়ে চলছে বাহারি পিঠা বিক্রির ধুম। প্রতিটি ভাপা পিঠার দোকানেই ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ধোঁয়া ওঠা গরম পিঠায় আড্ডা জমে ওঠে পিঠার দোকানে।
গ্রামাঞ্চলের মৌসুমি পিঠার ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোর অধিকাংশই পরিচালিত হয় নারীদের মাধ্যমে। সংসারে পুরুষের পাশাপাশি উপার্জনে বাড়তি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য দিন দিন বেড়েছে নারীদের এই পিঠার দোকান। এতে করে সংসারে কিছুটা বাড়তি উপার্জন হচ্ছে।
অনেক দোকানে ভাপা পিঠার পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে চিতই পিঠাও। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার পরেই জমে ওঠে এসব পিঠা বিক্রি। এসব পিঠার স্বাদ পেতে রিকশাচালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, ছুটির দিনে চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী—সব শ্রেণি-পেশার মানুষই পিঠার দোকানে ভিড় করছে। আবার কেউ কেউ বাড়িতে পরিবারের জন্যও পিঠা কিনে নিয়ে যান। এসব পিঠার মধ্যে ভাপা ও চিতই ১০ টাকায় বিক্রি হয়।
পিঠা কিনতে এসে অপেক্ষায় থাকা কেপ্রসিং মারমা (ওগাড়ী পাড়ার বাসিন্দা) জানান, শীতের সময় চিতই, ভাপা পিঠা খেতে ভালো লাগে। বিশেষ করে নানা রকম ভর্তা দিয়ে গরম চিতই পিঠা ও মুন্ডির স্বাদই আলাদা। এটা গরমের সময় ততটা খাওয়া যায় না। সকালবেলার সময় পিঠার জন্য দোকানে সিরিয়াল দিতে লাগে।
দুই-একজন বান্ধবী মিলে বাজারের বটতলায় ভাপা পিঠা খেতে আসা সুম্মিতা বলেন, বান্ধবীদের সঙ্গে ভাপা পিঠা খেতে এসেছি। শীতের আগমন কিছুটা শুরু হয়েছে। বিনা চালের গুঁড়া, নারিকেল আর গুড়ের ভাপা পিঠা ছাড়া শীত জমে না।
পিঠা বিক্রেতা মংপ্রুচিং (খাগড়াছড়ি পাড়ার) জানান, শীতে চিতই পিঠার চাহিদা বাড়ে। নানা রকম ভর্তা দিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মুন্ডি ও ভাপা পিঠা খেতে ভিড় লেগে থাকে। একই সঙ্গে ভাপা পিঠাও প্রচুর বিক্রি হয়। শীতের দিনে গরমের যন্ত্রণা থাকে না। লোকজন শান্তি নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে খেতে পারে। এ কারণে শীতে বছরের অন্য সময়ের চেয়ে পিঠা বিক্রি দুই থেকে তিন গুণ বাড়ে।
আরেক পিঠা বিক্রেতা জানান, শীত আসতেই কাজের চাপ বেড়ে যায়। পিঠা বানানো থেকে সবকিছু করতে হয়। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পার হয়। তিনি দুটি চুলায় পিঠা তৈরি করেন। প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে পিঠা বানানো ও বিক্রি।
পিঠা বিক্রেতারা জানান, বছরের এই সময়টা শীতকালীন পিঠার বেচা-বিক্রি বেশি হয়। তাই এই সময়ে দোকানিরা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করতে পারেন। শীত যত বাড়বে, তাদের পিঠা বিক্রিও তত বাড়বে। তারা জানান, পিঠা বিক্রির টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার খরচ যোগান দেন।











