সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে হার দিয়ে শুরু বাংলাদেশের
ক্রীড়া প্রতিবেদক: যতটা একতরফা ম্যাচ হবে ভাবা হয়েছিল, ততটা হয়নি। লেবাননের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়েছে বাংলাদেশ। বেঙ্গালুরুতে সাফে ৮ দলের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৯ র্যাঙ্কিংয়ের লেবাননের বিপক্ষে দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক ভালো ফুটবল খেলেছে হাভিয়ের কাবরেরার দল। কিন্তু স্কোরলাইনে এর প্রতিফলন নেই। শেষ ১৬ মিনিটের ঝড়ে সব লন্ডভন্ড। ৮০ মিনিটে লেবানন পেয়েছে প্রথম গোল। যোগ করা সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে দ্বিতীয়টি। অনেকটাই এগিয়ে থাকা লেবাননের কাছে শেষ পর্যন্ত ২-০ গোলে হেরে বাংলাদেশ শুরু করেছে বেঙ্গালুরু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ।
শক্তিশালী লেবাননের সঙ্গে অন্তত ড্রয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেও খেই হারিয়ে নিজেদের দোষে গোল খেয়েছে বাংলাদেশ। বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে শেষ দিকে গোল খাওয়ার চিরন্তন সেই ‘বদনাম’ ঘোচানো যায়নি। গোলের আগে অন্তত ১০ মিনিট বাংলাদেশ পাসিং ফুটবল খেলছিল। ওই সময় রক্ষণ ফাঁকা রেখে সবাই ওপরে উঠে যাওয়ার খেসারত গুনতে হয়েছে। ওই সময় রক্ষণ জমাট রাখা গেলে গোলটা হয়তো হতো না।
বাংলাদেশ প্রথম গোলটি খেয়েছে তারিক কাজীর শিশুতোষ ভুলে। তারিকের পায়ে বল থাকলেও সেটা তিনি ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর পা থেকে সহজেই বল নিয়ে যান লেবাননের করিম। তিনি বল ঠেলেন দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বদলি নামা অধিনায়ক হাসান মাতুককে। বাকি কাজটা হাসান করেছেন ঠান্ডা মাথায়। বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমানের কিছুই করার ছিল না। তবে আনিসুর হাসানের কাছে পৌঁছে যাওয়ার পর শরীরটা বলের সামনে না ফেলে কেন পেছন থেকে পা নিয়ে এসেছেন, সেটা অবশ্য বোঝা গেল না। শরীরটা বলের সামনে ফেললে সেটি আটকে গেলেও যেতে পারত।
গোল খেয়ে বাংলাদেশ চেষ্টা করেছে ম্যাচে ফিরতে। উল্টো শেষ বাঁশির আগে পাল্টা আক্রমণে ২-০ করেছে লেবানন। ডান দিক থেকে গড়া আক্রমণে সফল পরিণতি দেন খলিল বাদের। আনিসুরের এখানে করার ছিল না কিছু। খলিল বল ঠেলেন একেবারে ফাঁকে জালে।
বাংলাদেশ সামর্থ্য অনুযায়ী খেলেছে। প্রথমার্ধে তেমন কিছু করতে না পারলেও দু-তিনবার আক্রমণেও এসেছে। ফয়সাল আহমেদের একটা ক্রস সুমন রেজার কাছে পৌঁছার আগেই লেবাননের গোলকিপার ক্লিয়ার করেছেন। বাংলাদেশ দলের সেন্টারব্যাক তপু বর্মণকে ওপরে তেমন উঠতে দেখা যায়নি এদিন। সাধারণত তিনি বক্সে লম্বা বল ফেলেন। প্রথমার্ধে রক্ষণে বেশি ব্যস্ত থাকায় তপুকে আক্রমণে পাওয়া যায়নি। হতে পারে এটা দলীয় পরিকল্পনারই অংশ।
৫৬ মিনিটে বাংলাদেশ কোচ ৩টি বদল আনেন। অধিনায়ক জামালের জায়গায় হৃদয়, মোরসালিন আসেন মজিবর রহমানের বদলি হয়ে। ওই সময় বাংলাদেশ দল মাঠে ছিল প্রথাগত স্ট্রাইকারবিহীন। কারণ, রবিউল আসেন স্ট্রাইকার সুমন রেজার জায়গায়। তিনটি বদলের পর বাংলাদেশের খেলায় গতি আসে। ৬০ মিনিটে মোরসালিনের বাড়ানো লম্বা বল পেয়ে ফয়সাল আহমেদ বক্সে ঢোকেন। সামনে শুধু গোলকিপার। কিন্তু বলটা প্লেসিং করতে পারেননি। ফয়সাল বল মেরেছেন লেবাননের গোলকিপারের গায়ে। এটি ছিল বাংলাদেশের সহজতম সুযোগ।
৭২ মিনিটে ফয়সাল আহমেদের জায়গায় আসেন রাকিব। ম্যাচের ওই সময়টায় বলের দখল ভালো রাখছিল বাংলাদেশ। লেবাননে ফুটবলাররা বলের পেছনেই দৌড়াচ্ছিলেন বেশি। ম্যাচ থেকে এ সময় কিছুটা ছিটকে যায় তারা। অথচ খেলার ধারার বিপরীতে তখন বাংলাদেশের গোলমুখ খুলে ফেলে শারীরিকভাবে অনেকটা এগিয়ে লেবানন। উচ্চতায়ও তারা এগিয়ে। আর ফুটবলীয় মেধা তো আছেই। এই তিনটিরই সমন্বয় ঘটিয়ে লেবানন ম্যাচটা নিজেদের করে নিতে পেরেছে।
প্রথমার্ধে সময় যত এগিয়েছে, বাংলাদেশের রক্ষণে চাপ তত বাড়িয়েছে লেবানন। কিন্তু তারা চূড়ান্ত পাস বের করতে পারছিল না। ওপরে শুধু সুমন রেজাকে রেখে গোটা বাংলাদেশ দল রক্ষণে নেমে যাওয়ায় ফাঁকা জায়গা পায়নি লেবাননের ফরোয়ার্ডরা। ফলে শটও সেভাবে নিতে পারেননি তাঁরা। যে কারণে প্রথমার্ধটা গোলশূন্য রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ।
দুই দেশের এটি তৃতীয় ম্যাচ। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অ্যাওয়ে ম্যাচে বাংলাদেশ ৪-০ গোলে হারে লেবাননের কাছে। ফিরতি ম্যাচে ঢাকায় জেতে ২-০ গোলে। ১২ বছর পর আরেকটি লড়াইয়ে আজ ড্রয়ের আশা জাগিয়ে বাংলাদেশ পারেনি পুরো ৯০ মিনিট সমানতালে খেলতে পারার সামর্থ্যের অভাবেই।
কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরা এদিন একাদশে জায়গা দিয়েছেন চোট কাটিয়ে ফিট হওয়া ডিফেন্ডার তপু বর্মণকে। কম্বোডিয়া ম্যাচে একমাত্র গোলদাতা মজিবর রহমানও এই ম্যাচেও একাদশে ছিলেন। কম্বোডিয়া একাদশ থেকে সাফের প্রথম ম্যাচের একাদশে একটি পরিবর্তন এনেছেন কাবরেরা। রক্ষণে আলমগীর মোল্লার পরিবর্তে তপুকে দলে ঢুকিয়েছেন। কোচ তাঁর মতো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। কিন্তু হার দিয়েই সাফ শুরু করতে হলো তাঁকে।
বাংলাদেশ একাদশ: আনিসুর রহমান, তপু বর্মণ, বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী, ফয়সাল আহমেদ, জামাল ভূঁইয়া, সোহেল রানা, মজিবর রহমান, মেহেদী হাসান, সোহেল রানা ও সুমন রেজা।