ঢাকা | ডিসেম্বর ৬, ২০২৫ - ১০:১০ অপরাহ্ন

শিরোনাম

চসিকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চলাচলের রাস্তায় বর্জ্য ফেলায় মহল্লা কমিটির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

  • আপডেট: Saturday, December 6, 2025 - 7:12 pm

 

চট্টগ্রাম ব্যুরো।

চট্টগ্রাম নগরীর ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের জনবহুল খালপাড় এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আবারও চলাচলের রাস্তায় ময়লা–আবর্জনা ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা, মুসল্লি ও স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি, রসুলবাগ সমাজকল্যাণ পরিষদের নির্দেশে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা গত ৫ ডিসেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যায় অন্তত পাঁচটি ময়লার ভ্যানগাড়ির আবর্জনা বায়তুল মামুর জামে মসজিদ, কবরস্থান ও নিকটস্থ আবাসিক বাসাবাড়ির সামনে রাস্তায় ফেলে যায়। এতে পুরো এলাকা তীব্র দুর্গন্ধে অসহনীয় হয়ে ওঠে।

এর আগে, গত ২৬ নভেম্বর (বুধবার) একই ঘটনার প্রতিবাদে গ্রীন সিটি হাউজিং সোসাইটি, একর্ড গ্রীন ভিলেজ ফ্ল্যাট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষ—পুরুষ, নারী ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে খালপাড় এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে একর্ড গ্রীন ভিলেজের সভাপতি মোহাম্মদ এরশাদ উল্লাহ, প্রফেসর নুরুল্লাহ, মোহাম্মদ আলম খান, ইসমাইল জসীম, নাজিমুদ্দিন, সাংবাদিক ইসমাইল ইমন, সাইফুল ইসলাম, আজিজুল হক, ছমদুল করিম ভুট্টো, সালমান ফারসি, সালাউদ্দিন চৌধুরী, চৈতি বড়ুয়াসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে তাঁরা অভিযোগ করেন, “চসিকের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ম থাকা সত্ত্বেও মহল্লা কমিটির কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ইচ্ছে করে রাস্তাকে স্থায়ী ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছেন। এতে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের চরম ক্ষতি হচ্ছে।”

মানববন্ধনে উপস্থিত নারী ও শিশুরা বলেন, “স্কুলে যাওয়া–আসার সময় ভয়াবহ দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ি। রাতদিন কুকুরের উৎপাত, মশা–মাছির বংশবিস্তার এবং ময়লা ছড়িয়ে পড়ায় হাঁটাই কষ্টকর হয়ে গেছে। আমরা সুস্থ পরিবেশে বাঁচতে চাই।”

এলাকাবাসীর অভিযোগ ময়লার স্তূপ থেকে পচা পানি ও বর্জ্য গড়িয়ে খালে পড়ছে, ফলে খাল ভরাট হয়ে বর্ষায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা বাড়ছে। আশপাশের মসজিদে মুসল্লিদের যাতায়াতে তৈরি হচ্ছে বড় ধরনের বাধা। কবরস্থানের পাশে দুর্গন্ধ ও নোংরা পানি ছড়িয়ে পবিত্রতাও নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি তাদের।

এলাকাবাসী জানান, বর্জ্যের কারণে রাস্তা প্রায় অচল হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালমুখী রোগী, বয়স্ক মানুষ ও গর্ভবতী নারীদের নিয়েও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারে না অনেক সময়।

স্থানীয় একজন বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “মানুষের বাসাবাড়ির গেটের সামনে এভাবে বর্জ্যের পাহাড় বানানো কোনো সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না। অভিযোগ করলেও সমাধান হচ্ছে না।”

চসিকের পরিচ্ছন্নতা বিভাগ পূর্বে রাস্তায় ময়লা ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে লিখিত নোটিশ লাগিয়ে দেয়। পরিচ্ছন্নতা বিভাগ নিয়মিত ময়লা সংগ্রহের জন্য নির্ধারিত পয়েন্টও রাখে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, রসুলবাগ সমাজকল্যাণ পরিষদের কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি নিজেদের সুবিধার জন্য আবাসিক এলাকায় ভ্যানগাড়ি এনে বর্জ্য ফেলাতে নির্দেশ দেন।

স্থানীয়দের দাবি, চসিকের অঘোষিত ‘ক্লিন, গ্রীন, হেলদি অ্যান্ড সেফটি সিটি’ উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে হলে এ ধরনের অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন পূর্বদেশ–কে বলেন,
“নির্ধারিত স্থান ছাড়া কোথাও বর্জ্য ফেলতে দেওয়া হবে না। রাস্তায় ময়লা ফেলে নাগরিকদের ভোগান্তিতে ফেলা সম্পূর্ণ অমানবিক ও দণ্ডনীয় কাজ। চসিকের যেকোনো নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যত প্রভাবশালীই হোক, আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবই। শহরকে ক্লিন, গ্রীন, হেলদি ও নিরাপদ রাখা আমাদের দায়িত্ব, এবং এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”

তিনি আরও বলেন,
“আমি ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্নতা বিভাগকে এ ঘটনার বিষয়ে তদন্ত ও দ্রুত আবর্জনা অপসারণের নির্দেশ দিয়েছি। স্থানীয়দের স্বাস্থ্যঝুঁকি, পরিবেশ দূষণ এবং মসজিদ–কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট হওয়ার ঘটনাকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখছি। প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”