শান্তিচুক্তি বাতিল ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি-পিসিসিপি’র
নিজস্ব প্রতিবেদক।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শান্তিচুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর শাখা।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকাল ৩ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে পিসিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি রাসেল মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক রিয়াজুল হাসানের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় পিসিএনপি’র সাংগঠনিক শেখ আহমেদ রাজু ও সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ আবু তাহের তারা এ দাবি করেন এবং ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ আহমেদ রাজু বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা শান্তিচুক্তির ২৮ বছর পার হলেও পাহাড়ে দৃশ্যমান কোনো শান্তি ফিরে আসেনি বরং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, অস্ত্রের ঝনঝনানী এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠির তৎপরতা আরো বেড়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে সশস্ত্র সংগঠনগুলো, এদের মধ্যে অন্যতম জেএসএস(সন্তু), ইউপিডিএফ(প্রসিত), কেএনএফ বা কেএনএ।
সমাবেশে পিসিসিপি ঢাকা মহানগর সভাপতি রাসেল মাহমুদ বলেন, এই শান্তিচুক্তি পাহাড়ে অশান্ত চুক্তি হয়ে দাড়িয়েছে। এই চুক্তির আওতায় চাকমা জনগোষ্ঠী ছাড়া পাহাড়েন অন্যান্য জনগোষ্ঠী ১০% সুবিধাও ভোগ করতে পারতেছেনা। গত ২৮ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বতা চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা পরিষদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অনির্বাচিত চেয়ারমান সন্তু লারমা এবং অন্যান্য সদস্যরা পার্বত্য চটগ্রামের উন্নয়নের বদলে সরকারের উদ্যোগে গ্রহণ করা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই করেননি। অনেক দুর্গম এলাকায় সড়ক, এখনো অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবার মান ও প্রাপ্যতা সীমিত, শিক্ষা খাতে বৈষম্য স্থায়ী রয়ে গেছে, আর প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে ম্রো, বম, চাক, খিয়াং, খুমি, তঞ্চঙ্গ্যা , ত্রিপুরা, উন্নয়ন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। একইভাবে বাঙালি জনগোষ্ঠীও বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনায় বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার হয়েছে।
স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির আহ্বায়ক জিয়াউল হক বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়—এটি বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকারভুক্ত অঞ্চল। পাহাড়ি-বাঙালি সব জনগোষ্ঠীর সমান অধিকার, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিশ্চিত না হলে স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়। আমরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, উন্নয়ন কাঠামোয় জবাবদিহি বাড়ানো এবং বর্তমান বাস্তবতা বিবেচনায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাতিলের জানাচ্ছি। দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পার হলেও চুক্তির মূল লক্ষ্য-সম্প্রীতি, উন্নয়ন ও অংশগ্রহণমূলক প্রশাসন-পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতা, আঞ্চলিক পরিষদগুলোর ব্যর্থতা এবং কিছু প্রভাবশালী মহলের একপেশে প্রচারণাই শান্তি বাস্তবায়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান বলেন, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ভারত, চীন, আমেরিকা উপজাতি বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছে। তাছাড়া সম্প্রতি ভারত থেকে প্রকাশ্যে বাংলাদেশের পাহাড়কে বিচ্ছিন্ন করার হুমকী আসছে। সুতরাং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে এসব সন্ত্রাসী সংগঠন যেমন-জেএসএস,ইউপিডিএফ, কেএনএফ এর মতো সংগঠনকে জঙ্গী,রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। এই সশস্ত্র সংগঠনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে তথাকথিত জুম্মল্যান্ড নামে আলাদা একটি রাষ্ট্র গঠন করা।
সমাবেশে পিসিসিপি, ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি সরকারের নিকট ৫ দফা দাবী তুলে ধরেন-
১. সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে এবং সকল সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি তথা শান্তিচুক্তি সংশোধন এবং পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।পার্বত্য চট্টগ্রাম সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্র ও সংবিধানবিরোধী জাতিগত বৈষম্যমূলক প্রচলিত আইন, চুক্তি ও বিধিসমূহ সংস্কার করে দেশের সকলের জন্য এক সংবিধান ও এক আইন প্রণয়ন ও জারী করতে হবে।
২. বিচ্ছিন্নতাবাদী জেএসএস, ইউপিডিএফ সহ সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে।
৩. বাংলাদেশের উপজাতিদের সম্বোধনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অখণ্ডতাবিরোধী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ ও ‘জুম্ম’ শব্দ ব্যবহার এবং বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের সম্বোধনে ‘সেটেলার’ শব্দ ব্যবহারকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারী করতে হবে। ব্যক্তি, এনজিও, মিশনারী, গণমাধ্যম কিংবা প্রতিষ্ঠান যারাই উপরোক্ত শব্দ ব্যবহার করবে তাদেরকে কালো তালিকাভুক্ত করে এদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো বিদেশী এসব শব্দ ব্যবহার করলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে শক্তভাবে তার প্রতিবাদ জানাতে হবে এবং রাষ্ট্রের অভান্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালা অনুয়ায়ী তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
৪. পার্বত্য অঞ্চলে চলমান অস্থিতিশীলতা নিরসন, সন্ত্রাস দমন ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক সেনা ক্যাম্প বাড়াতে হবে।
৫. ১৯৯৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী উপজাতি কর্তৃক সশস্ত্র কার্যক্রম বন্ধ না করায় সংবিধানবিরোধী পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সংশোধন এবং ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি বাতিল করতে হবে।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, ফারুক হাসান, সিনিয়র সহ-সভাপতি গণঅধিকার পরিষদ, মোঃ সাহাদাৎ ফরাজি সাকিব, ঢাকা-১০আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, ইমরান হোসাইন, সহ-সভাপতি, পেশাজীবি অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় সংসদ, জিয়াউল হক, আহ্বায়ক স্টুডেন্ট ফর সাভারেন্টি, সামসউদ্দিন, সদস্য সচিব স্বাধীনতা সুরক্ষা মঞ্চ কেন্দ্রীয় সংসদ, আল আমিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি পিসিসিপি কেন্দ্রিয় কমিটি, মিজান উদ্দিন সিনিয়র সহ-সভাপতি পিসিসিপি ঢাকা মহানগর শাখা, নজরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক পিসিসিপি ঢাকা মহানগর, মুহিবুল্লা পারবেজ, অর্থ সম্পাদক পিসিসিপি ঢাকা মহানগর শাখ সহ পিসিসিপির বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।











