চট্টগ্রাম বন্দরে এনসিটি পরিচালনায় হাইকোর্টের দ্বিধা-বিভক্ত রায়
জাগো জনতা অনলাইন।। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির বৈধতা নিয়ে হাইকোর্ট দ্বিধা-বিভক্ত রায় দিয়েছে। বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফাতেমা নজীব চুক্তি প্রক্রিয়া অবৈধ ঘোষণা করেন, আর জুনিয়র বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার একই প্রক্রিয়া বৈধ বলে রায় দেন।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ার পৃথক পৃথকভাবে এ রায় ঘোষণা করেন। এখন বিষয়টি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পর্যালোচনা করে নতুন বেঞ্চ গঠন করবেন, যাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া যায়।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। এছাড়া অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ এবং ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক।
যদিও পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দেশের স্বার্থ রক্ষা করেই বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের দেয়া হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার এই ক্ষমতা রাখে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, গত ৩০ জুলাই এনসিটি পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। সেই রুলের শুনানি শেষ হয় ২৫ নভেম্বর। একইসঙ্গে আদালত জানতে চায়, কোনো অপারেটরকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুযায়ী ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং নিশ্চিত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে রিটটি করেন সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন। রিটে বিবাদী করা হয়েছে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে ২৬ এপ্রিল এক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামের প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়। আদালত রিটের মাধ্যমে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে চায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এ ধরণের বিদেশি চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে। রিটের মাধ্যমে চুক্তির প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আইনগত দিকগুলো নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের দ্বিধা-বিভক্ত রায় গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন এবং পর্যালোচনা প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হবে।
হাইকোর্টের এ রায় চট্টগ্রাম বন্দরের নীতি, বিদেশি কোম্পানির সাথে চুক্তি এবং এনসিটি পরিচালনার স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়ার ওপর আদালতের নজর রাখা হবে।










