ঢাকা | সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪ - ৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

বিলুপ্তির পথে মানবতার দেয়াল

  • আপডেট: Thursday, June 22, 2023 - 12:44 pm

এম এইচ সৈকতঃ অনেক উৎসাহ ও আশা নিয়ে তরুনদের হাতধরে বাংলাদেশে শুরু হয়েছিলো মানবতার দেয়াল। যদিও মানবতার দেয়ালের শুরুটা হয়েছিলো মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পরবর্তীতে তরুনদের মহতি উদ্যোগের সাধুবাদ জানিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশেই শুরু মানবতার দেয়াল। যেখানে লেখা থাকতো আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যান প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যান। কিন্তু আজ সেই মানবতার দেয়াল বিলুপ্তির পথে।

আজ বৃহস্পতিবার ( ২২ জুন ২০২৩) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা  ঘুরে দেখা যায় মানবতার দেয়াল লেখাটা কোন রকম থাকলে নেই সেখানে কোন প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় জিনিস।

২০১৫ সালে ইরানের উত্তর-পূর্বের শহর মাশাদে প্রথম এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিতে অজ্ঞাত কোনো ব্যক্তি এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

সেই উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৫ সালের নভেম্বরে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল এসসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০১৭ সালে এমন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়। ২০১৮ সালের ৭ই আগস্ট কিশোরগঞ্জের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ‘মহানুভবতার দেয়াল’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়।

রাজধানীতে ২০১৯ সালের ১২ জানুয়ারি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় পরীক্ষাগারের দেয়াল ঘেষেই প্রথম একটি উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়।

পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতের সময়ে মানবতার দেয়ালের কিছুটা দেখা মিললেও গরমে নেই কোন ছোঁয়া। বাড্ডা এলকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, আমার বাসার সামনে বছর তিন আগে এই উদ্যোগটি বেশ আলোচিত হয়েছিলো কিন্তু এখনো সেই উদ্যোগটি হারিয়ে গেছে।

রামপুরা আম্বিয়া সার্কেল টাওয়ারের সামনে দোকানদার রিওয়াজ হোসেন জানান, আমাদে দোকানের পাশে তরুনরা মানবতার দেয়াল শুরু করেছিলো কিন্তু এখন দেয়াল থাকলেও নেই জিনিসপত্র। আমার মনে হয় শীতে আবার শুরু হবে।

সামাজিক এ মহতি উদ্যোগ কেন হারিয়ে যায় সে বিষয়ে কথা হয় হেল্পিং হ্যান্ড বিডির চেয়ারম্যান নয়ন মুরাদের সঙ্গে। তিনি জানান, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উদ্যোগটি অসাধারণ। অসহায় মানুষ কারও কাছে হাত না পেতেই প্রয়োজনীয় কাপড় সংগ্রহ করতে পারতো। কিন্তু আমাদের দেশে সব ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত কিছু সমস্যা থাকে। এখানেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কাপড়গুলো এমনভাবে রাখা হতো যে, বৃষ্টিতে ভিজে কিংবা ময়লা লেগে নষ্ট হয়ে যেত। আবার অনেকে সব কাপড় এক সঙ্গে নিয়ে বিক্রি করে দিতো! এস কারণেই উদ্যোগ টি সফল হয়নি। তবে এ ধরনের উদ্যোগ সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা গেলে অসহায়, দরিদ্র মানুষ নিঃসন্দেহে উপকৃত হবে।

এ বিষয়ে সামাজিক সংগঠন সংস্কারের সভাপতি এম এ খালেক জানান, সমাজে এরকম ভালো কিছু উদ্যোগ আমাদের দেশে অচিরেই হারিয়ে যায়। কারণ যে দেশে গুনিজনের কদর নাই সেখানে ভালো কাজেরও স্থায়ীত্ব হয় না তেমনি ভালো মানুষ তৈরি হয় না।

এ বিষয়ে সরকারি বি এম কলেজের সমাজ বিজ্ঞানের প্রফেসর ইসমাইল হোসেন জানান, কাজটি যখন শুরু হয়েছিলো তখন ভালোই লেগেছিলো। আমাদের অনেক অপ্রয়োজনীয় পোশাক এমনি ফেলে দেই। তরুনদের মহতি উদ্যোগের কারণে তখন সেগুলো আর ফেলতে হতো না। তবে এখন আবার ফেলে দেই। উদ্যোগ বিলপ্তুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ভালো কাজ কখনো শেষ হয়ে যায় না। শুরু যেহেতু হয়েছে এর রেশ থেকেই যাবে। তবে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সবাই এগিয়ে আসলে মানবতার দেয়াল সবার কল্যাণে আরও ব্যাপক সাড়া ফেলবে।