অরণ্যের নিঃশব্দ স্রোতে শিলাছড়া ঝরনার আহ্বান
মো. আল আমিন, দীঘিনালা প্রতিনিধি।
পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা, উপত্যকা আর অরণ্যের সবুজে মোড়ানো জনপদ খাগড়াছড়ি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই পাহাড়ি জেলা এখন সরগরম নতুন এক ঝরনার সন্ধানে। দীঘিনালা ও রাঙামাটির লংগদু সীমান্তবর্তী শিলাছড়ায় আবিষ্কৃত হয়েছে জেলার অন্যতম বড় ও মনোমুগ্ধকর ‘শিলাছড়া ঝরনা’।
শিলা বা পাথরে মোড়ানো ঝিরার নামেই এর নামকরণ—‘শিলাছড়া’। দুর্গম বুনো পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এই ঝরনা এখন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের কাছে নতুন এক গন্তব্য হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
লোকালয় থেকে ঝরনায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। পথে উঁচু-নিচু পাহাড় নয়, হাঁটতে হয় ঠান্ডা ঝিরিপথ ধরে। তাই পথের ক্লান্তিও তুলনামূলক কম। শীতল পানিতে হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ে টারশিয়ান যুগের বিশাল পাথরে মোড়ানো পাহাড়। ঝিরির সরল পথে এগোতেই মুগ্ধতা ছুঁয়ে যায় পথিকের মন।
পাহাড়ি গ্রাম আর ছড়ার স্রোত পেরিয়ে মূল ঝিরিতে নামলেই চোখে পড়ে এক বিস্ময়কর দৃশ্য। প্রায় ২০ থেকে ৪০ ফুট প্রশস্ত ঝিরিটি বড় বড় পাথরে ঠাসা—যেন প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া এক অনন্য ভাস্কর্য।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মো. জাকির হোসেন বলেন, “আমরা দীঘিনালা থেকে গাড়িতে ডাঙ্গাবাজারে গিয়ে সেখান থেকে দুই ঘণ্টা পায়ে হেঁটে শিলাছড়া ঝরনায় পৌঁছাই। মনটা জুড়িয়ে যায়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য এটি হতে পারে নতুন এক সম্ভাবনাময় ঝরনা।”
রেংকায্য উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উষা আলো চাকমা বলেন, “খুবই সুন্দর একটি ঝরনা এটি। প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া পেতে চাইলে একবার আসতেই হবে এখানে।”
দীঘিনালা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সফিউল আলম বলেন, “আমি সদ্য দীঘিনালায় যোগদান করেছি। শিলাছড়া ঝরনা দেখতে এসে খুব ভালো লেগেছে। এখানকার মানুষের জীবনযাপন কাছ থেকে দেখার সুযোগও পেয়েছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইনামুল হাসান বলেন, “শিলাছড়া ঝরনা শুধু পর্যটন সম্ভাবনাই নয়, এখানকার মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবিও তুলে ধরে। এলাকার উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার অংশ হিসেবে একটি সেতু নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।”
সবুজ পাহাড়, সাদা পানির ধারা আর নিসর্গের মায়ায় ঘেরা শিলাছড়া ঝরনা যেন অরণ্যের নিঃশব্দ স্রোতে প্রকৃতির এক মুগ্ধ আহ্বান।











