পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে বিদেশিদের মহাপরিকল্পনা; চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাসঁ
 
		নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে ভারতসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশের কিছু রাজনীতিবিদ ও সংগঠন ‘মহাপরিকল্পনা’ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি কার্যবিবরণীতে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে ভারতের পক্ষ থেকে ‘গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড’ গঠন এবং পশ্চিমা এনজিওগুলোর পক্ষ থেকে পূর্ব তিমুরের মতো পৃথক রাষ্ট্র গঠনের তৎপরতা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক ও বাম রাজনৈতিক দলের নেতারা এই দেশি-বিদেশি চক্রের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন পার্বত্য জেলাকে অস্থিতিশীল করার আরো চেষ্টা হতে পারে বলে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য ১০ পৃষ্ঠার একটি ‘অতি গোপনীয়’ কার্যবিবরণী প্রস্তুত করে, যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে দেশি-বিদেশি অপতৎপরতার বিস্তারিত তুলে ধরে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যবিবরণীর ৫ নম্বর পৃষ্ঠায় ভারতের এই চক্রান্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ভারতের ত্রিপুরার রাজপরিবারের প্রধান প্রদ্যোত বিক্রম মানিক্য দেব বর্মা বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা ও ত্রিপুরাকে নিয়ে ‘গ্রেটার ত্রিপুরা ল্যান্ড’ গঠনের লক্ষ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
তিনি দাবি করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একসময় বাংলাদেশের অংশ ছিল না এবং সেখানকার চাকমা জনগোষ্ঠী কখনোই বাংলাদেশের অংশ হতে চায়নি। তাঁর মতে, ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চল ত্রিপুরার অংশ এবং সময় এসেছে এটিকে একত্র করে ভুটানের মতো একটি ‘বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র’ গঠনের। বর্মা দাবি করেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি জনগোষ্ঠী আলাদা রাষ্ট্র চায় এবং তারা এর জন্য প্রস্তুত।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনগুলোর বরাত দিয়ে কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, কিছু বামপন্থি সংগঠন এবং দেশি-বিদেশি কয়েকটি এনজিও পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘পূর্ব তিমুর কিংবা দক্ষিণ সুদান’-এর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাইছে।
শুধু সেপ্টেম্বরেই তিন পার্বত্য জেলায় পশ্চিমা কয়েকটি দেশের ১৩ জন ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ সফর করেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
একজন উপদেষ্টা মন্তব্য করেছেন, “দক্ষিণ সুদান ও পূর্ব তিমুরের রাজনৈতিক পরিবর্তন লক্ষ করলে দেখা যাবে, এর সূচনা হয়েছিল প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যাতে এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, তা এখন থেকেই আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চিন্তা করতে হবে।”
কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র আসে মূলত ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে। আর্থিক কষ্টে পড়লে ভারতীয় কিছু গ্রুপও পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে।
চাকমা সার্কেল চিফ দেবাশীষ রায়-এর কর্মকাণ্ড নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। কথিত ‘মারমা কিশোরী ধর্ষণ’-এর মতো অসত্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে পাহাড়িদের অশান্ত করার অপচেষ্টা চালান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরে সরকারি মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদনে ওই ধর্ষণের ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ভারতীয় উপজাতীয় সংগঠনগুলো (যেমন অল ইন্ডিয়া চাকমা স্টুডেন্ট ইউনিয়ন) এবং মিয়ানমারের রাখাইন ছাত্র সংঘ বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে সরকার ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। দিল্লিতে বসবাসরত ইউপিডিএফ (প্রসীত) সমর্থিত সুহাস চাকমা জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার মিথ্যা অভিযোগ’ উত্থাপন করেছেন।
রাজনীতিবিদ, শিক্ষক ও সুশীল সমাজের নাগরিক সেজে পার্বত্যাঞ্চলকে অশান্ত করে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কাজ করছে, তাদের নামও উল্লেখ করা হয়েছে কার্যবিবরণীতে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘খাগড়াছড়ির কথিত মারমা কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাম রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপজাতি নেতারা সরকার ও সেনাবাহিনী নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেছেন। তাদের মধ্যে ইউল্যাবের শিক্ষক অলিউর রহমান, ফারজানা প্রভা, অলিক মৃ, জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক, টনি চিরান, সুলতানা কামাল, খুশী কবির, শামসুল হুদা, জাকির হোসেন, গোলাম মাওলা রনি, হেনা চাকমা, রুপাইয়া তঞ্চঙ্গা, সুর্মি চাকমা, অধ্যাপক ড. মেজবাহ কামাল ও অনন্ত তঞ্চঙ্গা উল্লেখযোগ্য।
সাবেক সচিব শফিউল আজিম সহ সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জাতীয় স্বার্থে ধর্ম, বর্ণ, পেশা ও জাতিগত বিভেদের ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
ভৌগোলিক কারণে সামরিক সক্ষমতা বাড়ানো, বেসামরিক প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব পালন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা ও উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।
শফিউল আজিম সতর্ক করেছেন, “পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এখন এটি জোরদার হয়েছে। … ঐক্যবদ্ধ না হলে সামনে গুরুতর বিপদ।”
মন্ত্রিপরিষদ সূত্র জানিয়েছে, ইতঃপূর্বে পার্বত্য এলাকার একটি পাহাড়ি সংগঠনের পক্ষ থেকে তিন পার্বত্য জেলাকে রুলস অব বিজনেস থেকে বাদ দেওয়ার মতো সংবিধান পরিপন্থী আবদার জানিয়ে সরকারের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, যা ঐ ষড়যন্ত্রের গভীরতা প্রমাণ করে।
সূত্র: আমার দেশ

 
			









