থানা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু এখনও চলছে অধিকার-এর সভায় বক্তারা
চট্টগ্রাম ব্যুরো ।।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট হাসিনার দুঃশাসনের সময়কালে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। বর্তমান সরকারের আমলে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। পুলিশ প্রশাসনে আওয়ামী অফিসাররা বহাল থাকায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তারাই এসব ঘটনা ঘটিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে চায়। সরকারের উচিত এসব ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।
শনিবার দুপুরে নগরের একটি হোটেলে মানবাধিকার সংগঠন “অধিকার” আয়োজিত “কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার অ্যান্ড অপশনাল প্রটোকল টু দ্য কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার” বিষয়ক সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সঞ্চালনা করেন পরিচালক এস. এন. নাসির উদ্দিন এলাম। এতে মূল তথ্য উপস্থাপন করেন অধিকারের পরিচালক তাসকিন ফাহমিনা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. এনায়েত উল্লাহ পাটোয়ারী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি, এনসিপি নেতা রাফসান জনি, অধিকার-এর চট্টগ্রাম ফোকাল পারসন ওচমান জাহাঙ্গীর, অ্যাডভোকেট জিয়া হাবিব আহসান, জেএসডি (রব)-এর নেতা মোস্তাফা কামাল, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সেক্রেটারি সিবুর শুভ, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের রফিকুল ইসলাম সেলিম, আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সোহাগ কুমার বিশ্বাস, পুলিশ কমিশনার (সিএমপি) প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদ (ডিসি), ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জের প্রতিনিধি একরামুল হোসেন (পিপিএম), জেলা পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি মো. রাসেল (অ্যাডিশনাল এসপি), ডিপুটি জেলার মো. রাকিব শেখ, মানবাধিকার কর্মী ইঞ্জিনিয়ার মো. মোমেন, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার (অধিকার) মো. জিয়া উদ্দিন ও শাহ জালালসহ আইনজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক কর্মী, পরিবেশ কর্মী ও হেফাজতে নির্যাতনে অঙ্গ হারানো ভুক্তভোগীরা।
সভায় বক্তারা বলেন, বড় দলগুলোর রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ফিরে না আসলে নির্যাতনের ঘটনা কখনও কমবে না। অতীতে যা হয়েছে, আগামীতেও তা চলবে, বর্তমানে যেমন চলছে। শুধু পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নয়, কারাগারেও মৃত্যু হচ্ছে। সেখানে বন্দিদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়। তাদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হয় না, ভালোভাবে থাকতে দেওয়া হয় না। এছাড়াও বন্দিদের ওপর রাতদিন নির্যাতন করা হয়; তাদেরকে বেত্রাঘাতের মতো নানারকম শাস্তি দেওয়া হয়।
বক্তারা আরও বলেন, রাজনীতিবিদরাই পুলিশের ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। এজন্য পুলিশ সংস্কার করতে হবে। পুলিশকে যুগের পর যুগ একটি রাজনৈতিক গণ্ডির মধ্যে রেখে দেওয়া হচ্ছে। দেশের সচেতন মানুষ ও পুলিশ কর্মকর্তারা সংস্কার চাইলে অনেকেই তা চায় না। পুলিশকে রাজনৈতিকভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে আগের মতো; তাদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখতে চায় একটি মহল।
অধিকার-এর পরিচালক তাসকিন ফাহমিনা জানান, গত এক বছরে পুলিশ হেফাজতে ১৪টি মৃত্যু হয়েছে নির্যাতনের কারণে। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সালে কনভেনশন এগেইনস্ট টর্চার সনদেতে স্বাক্ষর করে। সেখানে কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। তাছাড়া হেফাজতে নির্যাতন বিরোধী আইন ২০১৩ সালেই পাস হয়েছে, কিন্তু হাসিনা সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি। বর্তমানে একটি ন্যাশনাল প্রিভেন্টিভ মেকানিজম (NPM) তৈরি করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু সরকার সনদে স্বাক্ষর করেছে, সেহেতু সেটি বাস্তবায়ন করতেই হবে। এতে জেলখানায় নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমে আসবে। জেলখানা ও থানায় কী হচ্ছে, তা মনিটরিং করা হবে। এতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা ফিরে আসবে। আমরা আশা করি, এ ধরনের নির্যাতন যেন আমাদের দেশে না হয় এবং আমরা সাধারণ মানুষ ও দায়িত্বশীলদের এ ব্যাপারে সচেতন করতে চাই—তারা যেন আরও আন্তরিক হয়। আমাদের দেশের পুলিশের আচরণ যেন আরও পেশাদার হয় এবং অপশনাল প্রটোকল কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরাও এ বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছি।











