শ্রমিকদের চলছে কর্মবিরতি চট্টগ্রাম বন্দর অচল : ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ প্রকাশ

দুপুরের পর বর্ধিত মাশুল প্রত্যাহার
কামাল পারভেজ, চট্টগ্রাম।
শ্রমিকদের চলছে কর্মবিরতি, বন্দরের লোড-আনলোড, পণ্য ও কনটেইনার আনা-নেওয়া সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। রোববার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪১ শতাংশ ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ব্যবসায়ী সমাজ। তারা বলছেন, বিদেশিদের সুবিধা দিতে এই বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়বে পণ্যের দামে।
নতুন ট্যারিফ শিডিউলে পণ্যবাহী গাড়ি, সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের গেটপাসের ফি বৃদ্ধির ঘটনায় প্রাইমমুভার, ট্রেইলার মালিক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন এই কর্মসূচি পালন করছে। একই দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্তঃজেলা ট্রাক মালিক সমিতি। তবে সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের কর্মসূচি দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দুপুরে বৈঠক করেন বন্দর চেয়ারম্যান। দুপুরে বন্দর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব ওমর ফারুক জানান, শুধুমাত্র পরিবহনের বর্ধিত মাশুল স্থগিত থাকবে। পুরোনো মাশুলেই যানবাহন বন্দরে প্রবেশ করতে পারবে। মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠানোর পরই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পণ্য বোঝাই না করেই চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ল ৬ জাহাজ
গত ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে ভারী গাড়ি প্রবেশের ফি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করায় শনিবার থেকে কনটেইনার পরিবহনের ট্রেইলার, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান বন্ধ রাখেন মালিক-শ্রমিকরা।
এদিকে কর্মবিরতির কারণে শনি ও রোববার এক হাজার একক কনটেইনার রপ্তানি পণ্য না নিয়েই বন্দর ছেড়েছে ৬টি জাহাজ। শনিবার থেকে কনটেইনারবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দরে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। দাবি আদায়ে সরকারকে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেয় পোর্ট ইউজার্স ফোরাম।
সূত্র জানায়, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে ভারী গাড়ি প্রবেশের ফি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করায় কনটেইনার পরিবহনের ট্রেইলার চালাচ্ছেন না মালিকরা। ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব ট্রেইলার আন্তঃজেলা রুটে কনটেইনার পরিবহন করে। তবে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন ডিপো বা অফডকের ট্রেইলার চলছে।
চট্টগ্রাম প্রাইমমুভার ও ফ্ল্যাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, কর্মবিরতি বা ধর্মঘট নয়, প্রাইমমুভার মালিকরা ৫৭ টাকার পাস ২৩০ টাকা করায় গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন।
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া জানান, সিঅ্যান্ডএফ মালিক ও শ্রমিকরা সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে চার ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করছে। মাশুলের সমাধান না হলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
বন্দরে বর্ধিত মাশুল নিয়ে প্রশ্ন, বোঝা ভোক্তার কাঁধে
বর্ধিত বন্দর মাশুলে চাপে ব্যবসা-বাণিজ্য, ভুগবে সাধারণ মানুষ
এদিকে, প্রাইমমুভার মালিকদের ট্রেইলার, আন্তঃজেলা পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল না করা এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কর্মবিরতিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে একসময় অচলাবস্থা তৈরি হবে। তাই নতুন ট্যারিফ নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সব স্টেকহোল্ডারের মধ্যে আলোচনা ও সমন্বয় প্রয়োজন।
শনিবার বিভিন্ন সেবায় অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপের প্রতিবাদে পোর্ট ইউজার্স ফোরাম আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন ট্যারিফ সমস্যার সমাধান না হলে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বন্দরের সবগুলো গেট বন্ধ রয়েছে, কোনো গাড়ি প্রবেশ করছে না। বন্দরের গেটগুলোতে ট্রাক কিংবা কাভার্ড ভ্যানের কোনো জটলা নেই।
বন্দরের ৫ নম্বর গেটে বসে থাকা সিঅ্যান্ডএফ জেটি সরকার মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “আমি ৩৫ বছর ধরে বন্দরে সিঅ্যান্ডএফের কাজ করছি। প্রথমে গেটপাস ৫০ পয়সা ছিল। ধীরে ধীরে বেড়ে ১০ টাকা হয়েছে। এখন এক লাফে ১১৫ টাকা করা হয়েছে। এজন্য আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। কোনো পণ্য খালাস নিচ্ছি না, কোনো পণ্য জাহাজীকরণও হচ্ছে না।”
চট্টগ্রাম ট্রেইলার মালিক সমিতির সভাপতি মোর্শেদ হোসেন নিজামী বলেন, “আকস্মিক প্রবেশ ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে আমরা ইতোমধ্যে কর্মবিরতি পালন শুরু করেছি। এখন আমাদের সঙ্গে সর্বস্তরের মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো একাত্মতা প্রকাশ করে তারাও ধর্মঘট শুরু করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বন্দর কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সুরাহা করবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি চলবে।”
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মোবারক আলী বলেন, “গেটপাস ফি বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। অথচ আমরা যাবতীয় রাজস্ব আদায়ে কাজ করি। বন্দরের উচিত আমাদের গেটপাস ফি একেবারে মওকুফ করে দেওয়া। সেখানে ১১৫ টাকা করা অযৌক্তিক বলে মনে করি।”