ঢাকা | অক্টোবর ১৯, ২০২৫ - ২:২১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম

১ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ৮ কোটিতে ক্রয় : রেলে দুর্নীতির নতুন নজির

  • আপডেট: Saturday, October 18, 2025 - 4:53 pm

 

কামাল পারভেজ।

বাংলাদেশ রেলওয়েতে আবারও বড় আকারের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাত্র ১ কোটি টাকার ডয়েটজ ডিজেল ইঞ্জিন স্পেয়ার পার্টস (Deutz Diesel Engine Spare Parts) ক্রয় করা হচ্ছে প্রায় ৮ কোটির বেশি টাকায় এমন অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও কিছু রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ই-জিপি (e-GP) সিস্টেমে প্রকাশিত চারটি টেন্ডার আইডি নং 1093826, 1093885, 1093744 এবং 1092157। দরপত্র খোলার তারিখঃ ২৬ ও ২৭ মে ২০২৫। এই টেন্ডারে মোট আটটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।

নিয়ম অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও অভিযোগ উঠেছে যে, সিইই/পূর্ব অফিসের কর্মকর্তা এই চারটি দরপত্রে Equivalent পণ্য উল্লেখ করেননি, ISO সনদ ও পণ্যের Technical Specification Details চাওয়া হয়নি। এসব গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছাড়া কীভাবে দরপত্রের মালামালের কারিগরি মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হলো, তা অন্য সকল দরপত্রদাতার বোধগম্য নয়।

এছাড়া যোগসাজশে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজটি প্রদান করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, এই কাজটি পেয়েছে Next Generation Graphics Ltd (NGGL), যা Fav Diesel Sales & Service গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। উক্ত গ্রুপের মালিকানা রয়েছে রেল মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর ছেলে ফারাজ করিমের হাতে।

রেলের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ফ্যাসিবাদ সরকার পালিয়ে গেলেও রেলের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ এখনো ফারাজ করিমের প্রভাবাধীন। কর্মকর্তাদের যোগসাজশে Fav Diesel Sales & Service প্রতিষ্ঠানটি প্রায় সব বড় টেন্ডারই নিজের কব্জায় নিয়ে নিচ্ছে।”

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, টেন্ডারে যে মালামালের প্রকৃত বাজারমূল্য ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা, সেটি ৮ কোটি টাকায় ক্রয় করা হচ্ছে। অর্থাৎ প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা বেশি দিয়ে সিইই/পূর্ব মোঃ শফিকুর রহমানের যোগসাজশে ও সহযোগিতায় সরকারি অর্থ আত্মসাতের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া ই-জিপি প্রক্রিয়ায় একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। যেমন—এই চারটি দরপত্রে Equivalent পণ্য উল্লেখ করা হয়নি, ISO সনদ ও পণ্যের Technical Specification Details চাওয়া হয়নি। এসব গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বাদ দিয়ে কীভাবে সিসিএস/পাহাড়তলী দপ্তর হতে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি-২৯ শর্ত লঙ্ঘন করে দরপত্র আহ্বান করা হলো এবং আবার দরপত্রের মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অন্যান্য সরবরাহকারীরা।

এ বিষয়ে জানতে সিসিএস/পাহাড়তলী মোঃ বেলাল হোসেন সরকারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং কল রিসিভ করেননি। সিইই/পূর্ব মোঃ শফিকুর রহমানের মুঠোফোনে কল দিলে ফোনটির সুইচ বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে, সিসিএস বেলাল হোসেন সরকার রাজশাহী রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলে থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দুদক মামলা করে। উক্ত মামলায় তাকে ওএসডি করা হয়। পরবর্তীতে তদবির করে তিনি পাহাড়তলী সিসিএস পদে যোগদান করেন।

পটভূমি ও বিশ্লেষণ: রেলের কর্মকর্তাদের একাংশের সঙ্গে প্রভাবশালী ঠিকাদারি গোষ্ঠীর আঁতাত নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে “কম দামে ক্রয়, বেশি দামে বিল”—এই পদ্ধতিতেই সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠছে। যেখানে ১ টাকার জিনিস ১০০ টাকায়, আর ১০০ টাকার জিনিস ১০০০ টাকায় ক্রয় করা হয়, সেখানে রেলের আর্থিক ক্ষতি অনিবার্য।