ঢাকা | অক্টোবর ১৬, ২০২৫ - ৮:৪৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

বিতর্কিত ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিত করা ও ৮দফা দাবিতে বান্দরবানে পিসিসিপি’র সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান

  • আপডেট: Thursday, October 16, 2025 - 4:05 pm

বান্দরবান প্রতিনিধি।
আগামী ১৯ই অক্টোবর রাঙামাটিতে বৈঠক ডেকেছে বিতর্কিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন। বৈঠক স্থগিতর করা এবং ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ, বান্দরবান পার্বত্য জেলা। আজ (১৬ অক্টোবর) বান্দরবান শহরস্থ কাপ অব জয় রেস্টুরেন্টে সকাল সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র পরিষদ বান্দরবান জেলার সাধারণ সম্পাদক হাবিব আল মাহমুদ, যুব পরিষদ’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইব্রাহিম, ছাত্র পরিষদ বান্দরবান জেলা সি. সহ-সভাপতি জমির উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর হোসেন ইমন, দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মিছবাহ উদ্দীন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান সৈকত, সহ-সভাপতি জানে আলমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে পিসিসিপি নেতৃবৃন্দরা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি বান্দরবান জেলা শাখা- পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ৫২% বাঙালি জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সাথে জানাচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৬ নামে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে সেখানে পার্বত্য বাঙালিদের কোন প্রতিনিধি নাই। কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবার আইন থাকায় এ কমিশন থেকে একপেশে যেকোন ধরনের সিদ্ধান্ত আসার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরণের একপেশে সিদ্ধান্তের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বৃহৎ বাঙালি জনগোষ্ঠী ভূমিহীন হয়ে যেতে পারে বলে আশংঙ্কা রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের ৯ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন সার্কেল চীফ(রাজা) ৩ জন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ১ জন আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সহ মোট ৭ জনের সবাই উপজাতি। ১ জন কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান ও অন্য ১ জন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। এতেই পরিষ্কার বুঝা যায় যে, ভূমি কমিশনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত ৫২% বাঙালি জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি নাই। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত বাঙালিরা এই আইন ও কমিশনের মাধ্যমে তাদের ভূমির অধিকার হারাবে বলে উৎকন্ঠিত। ভূমি কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ না রাখায় এটি একপেশে ও সংবিধান পরিপন্থি একটি ধারা ও একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা আঁকা হয়েছে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগ এর সাথে লক্ষ্য করছি, আগামী ১৯/১০/২০২৫ খ্রি. রোজ রবিবার সকাল ১১:০০ ঘটিকায় রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের শাখা কার্যালয়ে কমিশনের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে কমিশনের সকল সদস্যগণের এক সভা আহবান করা হয়েছে। সভাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠী চরম ভাবে ক্ষুব্ধ।

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ পিসিসিপি বান্দরবান জেলা শাখা দৃঢ়তার সঙ্গে জানাচ্ছে যে, পিসিসিপি ঘোষিত ৮দফা দাবি মানার আগ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের যেকোন বৈঠক রাজপথে থেকে কঠোর ভাবে প্রতিহত করবে। সচেতন ছাত্র-জনতার পক্ষে পিসিসিপি ঘোষিত আট দফা দাবি সমূহ:
১। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল জাতি গোষ্ঠী থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিশ্চিত করতে হবে।
২। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি এর কার্যক্রম শুরুর পূর্বে, ভূমির বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমি জরিপ সম্পন্ন করতে হবে।
৩। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির উপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৬ এর ধারা সমূহ বাতিল করতে হবে।
৪। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রবর্তন করতে হবে এবং সমতলের ন্যায় জেলা প্রশাসকগণকে ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির অধিকার দিতে হবে।
৫। কমিশন কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিস্পত্তির কারনে কোন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হলে তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি খাস জমিতে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ২০০১ সালের ভূমি কমিশন আইন অনুযায়ী বলবৎ করতে হবে।
৭। পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত রীতি, প্রথা ও পদ্ধতির পরিবর্তে দেশে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুসারে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৮। বাংলাদেশ সরকারের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্তীকৃত, অথবা কবুলিয়ত প্রাপ্ত মালিকানা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবেনা।

সর্বশেষ নেতৃবৃন্দ বলেন, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দেহে থাকা পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলের অধিকার বঞ্চিত নাগরিকদের অধিকারের পক্ষে পিসিসিপি কোন ছাড় দিবে না, তাই পিসিসিপি’র ৮দফা দাবি না মানা পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন এর কোনরূপ বৈঠক বিশেষ করে ১৯ অক্টোবর ২০২৫ খ্রি: রবিবারের বৈঠক রাঙামাটিতে যাতে অনুষ্ঠিত না হয় সেজন্য বৈঠক স্থগিত করার জোর দাবি জানাচ্ছি, অন্যথায় সভা স্থল ঘেরাও, অবরোধ সহ কঠোর কর্মসূচি পালন করবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)। সংবাদ সম্মেলন শেষে ৮দফা দাবী ও ভূমি কমিশনের বৈঠক বাতিলের দাবীতে বান্দরবান জেলা ছাত্র পরিষদ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।