ঢাকা | অক্টোবর ১৬, ২০২৫ - ৮:৪৮ অপরাহ্ন

শিরোনাম

রাঙামাটিতে ভূমি কমিশনের বৈঠক ঘিরে উত্তেজনা; অবরোধ, হরতাল ও বিক্ষোভের ডাক

  • আপডেট: Thursday, October 16, 2025 - 3:25 pm

 

রাঙামাটি প্রতিনিধি:
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক প্রতিহত করতে ১৯ অক্টোবর রবিবার দিনব্যাপী ছাত্র-জনতার আহ্বানে ব্যাপক কর্মসূচি পালন করা হবে। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার পক্ষে পিসিসিপি’র আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না করে ভূমি কমিশনের বৈঠক করার চেষ্টা করা হলে তা রাঙামাটির শান্তিপ্রিয় জনতাকে নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।

১৯ অক্টোবর রবিবার সারাদিনব্যাপী রাঙামাটি শহরের প্রতিটি মোড়ে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতা অবস্থান নেবে। অবস্থান নিয়ে বৈঠক স্থান ঘেরাও ও পৌর এলাকায় অবরোধসহ হরতালের কর্মসূচি পালন করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১১টায় রাঙামাটি শহরের এক রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে বৈঠক স্থান ঘেরাও, বিক্ষোভ ও পৌর এলাকায় অবরোধসহ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি) রাঙামাটি জেলা সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম তাজ।

এসময় তাজুল ইসলাম তাজ বলেন, “বিতর্কিত ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বৈঠক প্রতিহত করতে ও ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে আমরা আগামী রবিবার রাঙামাটি শহরে বিক্ষোভ, ঘেরাও ও অবরোধসহ হরতাল পালন করবো।” উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে দল-মত নির্বিশেষে সকলের উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সচেতন ছাত্র-জনতার পক্ষে পিসিসিপি ঘোষিত দাবি সমূহ হলো:
১। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সকল জাতিগোষ্ঠী থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিশ্চিত করতে হবে।
২। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যক্রম শুরুর পূর্বে ভূমির বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমি জরিপ সম্পন্ন করতে হবে।
৩। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির উপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশন (সংশোধনী) আইন ২০১৬ এর ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে।
৪। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রবর্তন করতে হবে এবং সমতলের ন্যায় জেলা প্রশাসকগণকে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার দিতে হবে।
৫। কমিশন কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কারণে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৬। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ২০০১ সালের ভূমি কমিশন আইন অনুযায়ী বলবৎ করতে হবে।
৭। পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত রীতি, প্রথা ও পদ্ধতির পরিবর্তে দেশে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুসারে ভূমি কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৮। বাংলাদেশ সরকারের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্তীকৃত অথবা কবুলিয়তপ্রাপ্ত মালিকানা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

এদিকে বাঙালিরা প্রশ্ন তুলেছেন, আমরা রাষ্ট্রের নিয়ম অনুযায়ী সরকারের কাছে ভূমির খাজনা প্রদান করি, আমাদের রয়েছে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ, নাগরিকত্বের পূর্ণ প্রমাণপত্র এবং জমির বৈধ দলিলাদি। তাহলে রাষ্ট্রীয় আইন উপেক্ষা করে সরকার কীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধির তথাকথিত “প্রথাগত আইন”, যা বর্তমানে কার্যত মৃত আইন হিসেবে বিবেচিত, সেই বিতর্কিত আইনের অধীনে গঠিত একটি কমিশনের মাধ্যমে আমাদের ভূমি কেড়ে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে আমাদের উচ্ছেদ করতে পারে?
একটি কমিশন তখনই গ্রহণযোগ্য হয়, যখন সেখানে উভয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয় এবং এর বিচারিক প্রক্রিয়া হয় আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও নিরপেক্ষ। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, কমিশন প্রথাগত রীতি ও পদ্ধতির মতো বিতর্কিত আইন এবং উপজাতি প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত এবং উপজাতিরা পার্বত্য চট্টগ্রামের সব ভূমির মালিকানা দাবি করছেন ব্রিটিশ শাসনবিধি (পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন) প্রথাগত আইনের ভিত্তিতে, যার পক্ষে কোনো প্রামাণ্য দলিল বা বৈধ কাগজপত্র উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।

সংবিধান ও কমিশনের রায়ের অসঙ্গতি:
আরও আশঙ্কাজনক হলো, কমিশনের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে কোনো আপিলের সুযোগ নেই।
অর্থাৎ কমিশনের রায়ই হবে চূড়ান্ত ও কার্যকর। বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ ও ১০৯ ধারায় নাগরিকদের বিচারপ্রাপ্তির অধিকার সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও এই কমিশন সেই অধিকারকে কার্যত অকার্যকর করে তুলেছে।
আইনজ্ঞরা একে বলেছেন: “একটি সাংবিধানিক বিচ্যুতি।” কারণ কোনো প্রশাসনিক বা আধা-বিচারিক সংস্থা যদি এমন ক্ষমতা পায় যে তার রায় চূড়ান্ত, তবে সেটি বিচারব্যবস্থার মৌলিক নীতিকেই ভেঙে দেয়।

এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পিসিসিপি রাঙামাটি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পারভেজ মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব পরিষদের সভাপতি মো. নূর হোসেন, পিসিএনপি’র রাঙামাটি জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ।