ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৫ - ৯:৫১ অপরাহ্ন

শিরোনাম

গ্রাহকদের ২৬ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে মাঠকর্মীর বিদেশে পালানোর অভিযোগ

  • আপডেট: Thursday, October 2, 2025 - 6:12 pm

হাটহাজারী প্রতিনিধি (চট্টগ্রাম)।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক হাটহাজারী শাখার সিনিয়র অফিসার মুনিয়া সুলতানা। তিনি ওই শাখায় শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালে আমেনা খাতুন নামে এক মাঠ সহকারীকে (মাঠকর্মী) অনৈতিক নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যাংকের অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। যা এখন ‘টক অব দ্য এরিয়া’তে পরিণত হয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত উক্ত ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদবীধারী মুনিয়া সুলতানা শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময়কালে শাখার মাঠকর্মী আমেনা খাতুন প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ২৬ লাখ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে তদারকি না করে বরং ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে পালিয়ে যাওয়া ওই মাঠকর্মীকে নানা অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ২০২৩ সালের জুন মাসে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছিলেন।

এর মধ্যে তাকে (শাখা ব্যবস্থাপক) ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পাশ্ববর্তী ফটিকছড়ি শাখায় বদলি করা হলেও তিনি কৌশলগত কারণে শারীরিক অসুস্থতাকে পুঁজি করে তার বিগত সময়ের অনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো ধামাচাপা দিতে পূর্বের কর্মস্থলেই থেকে যান। যদিও ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তার কর্মস্থলে সিনিয়র অফিসার ইমন হোসেন নামে একজন শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করার পরও আজ অবধি তিনি উর্ধ্বতন কর্তাদের ম্যানেজ করে একই শাখায় কর্মরত আছেন। অথচ উক্ত ব্যাংকের অন্য কোনো শাখায় এভাবে একই পদবীর দুইজন কর্মকর্তা নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

‘পিএসবি হোক দুর্নীতিমুক্ত’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে নিয়মিতই পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের দুষ্কৃতিকারী কর্তাদের নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয় তুলে ধরা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ২ মিনিটে ওই সিনিয়র অফিসার মুনিয়া সুলতানাকে নিয়ে উক্ত ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট করা হয়। এতে লেখা হয়— মুনিয়া বিএম (শাখা ব্যবস্থাপক) দায়িত্বে থেকে একজন মাঠ সহকারীকে ম্যানেজ করে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ভুয়া লোন তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এর মধ্যে ৫০% মুনিয়া নিজেই ঘুষ চুক্তির মাধ্যমে নিয়েছেন এবং ঐ মহিলা মাঠ সহকারীকে বিদেশ যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছেন।

এদিকে, মুনিয়া সুলতানা শাখা ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে থাকাকালে মাঠকর্মী আমেনা খাতুন ব্যাংকের গ্রাহকদের নির্ধারিত টাকা যথাযথভাবে জমা না করে আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাহকরা তার কাছে যান। ওই সময় শাখা ব্যবস্থাপক মুনিয়া সুলতানা গ্রাহকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন এবং মাঠকর্মী আমেনা খাতুন পালিয়ে যাননি বলে সাফাই দেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী গ্রাহকদের তাদের সঞ্চয় ও লোনের টাকা নিয়মিত পরিশোধ করতে হুমকি-ধমকি প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা গ্রামের শাহাজালাল পাড়ার এক ভুক্তভোগী গ্রাহক মিনু আক্তারের স্বামী রং মিস্ত্রি মো. সাইফুল ও আরেক ভুক্তভোগী শাহীন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, শাখা ব্যবস্থাপক মুনিয়া সুলতানা দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে মাঠকর্মী আমেনা খাতুন আমাদের গ্রাহকদের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছেন, যার দায় তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক সিনিয়র অফিসার মুনিয়া সুলতানা কখনো এড়াতে পারেন না। ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তার (শাখা ব্যবস্থাপক) কাছে আমরা গ্রাহকরা অনেকবার গিয়েছিলাম। তিনি তার উর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে আমাদের শান্তনা দিয়ে কালক্ষেপণ করেছেন এবং অর্ধ শতাধিক গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে আমেনা খাতুনকে বিদেশে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন।

বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী শাখার সিনিয়র অফিসার (তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক) মুনিয়া সুলতানা দায়িত্ব থাকাকালে মাঠকর্মী আমেনা খাতুনকে তার শারীরিক অসুস্থতার কারণে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটু ছাড় দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তবে এ ঘটনার জন্য তিনি দায়ী নন বলে জানান। তাছাড়া এর বেশি কিছু জানতে চাইলে প্রধান কার্যালয় (হেড অফিস) এর উর্ধ্বতন কর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সাংবাদিকদের পরামর্শ দেন।