ঢাকা | নভেম্বর ৯, ২০২৪ - ১০:৩৬ অপরাহ্ন

শিরোনাম

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের অবহেলা ও স্বেচ্ছাচারিতায় বান্দরবান শহরে পানির হাহাকার, ক্ষুব্ধ শহরবাসী

  • আপডেট: Tuesday, September 26, 2023 - 10:57 am

নিজস্ব প্রতিবেদক।। বান্দরবান পৌর এলাকায় পানি সরবরাহে অচলাবস্থায় নাকাল হয়ে পড়েছে শহরবাসী। পানি সরবরাহ নিয়মিতভাবে কবে চালু হবে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। তীব্র গরমের এই মৌসুমে নিয়মিত পানি সরবরাহ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা।

শহরের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, গত ৫/৬ দিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বাসাবাড়ির ট্যাংকে সঞ্চিত পানি শেষ হয়ে যাওয়ায় কেউ ছুটছেন পুকুর বা নদীতে। কেউ পানীয় জলের জন্য বাধ্য হয়ে দোকান থেকে বোতলের পানি কিনে খাচ্ছেন।

এই ব্যাপারে বান্দরবান শহরের বাসিন্দা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মোঃ মজিবর রহমান বলেন- আমিও দুইবার জেলা পরিষদের সদস্য ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের কনভ্যেনার ছিলাম। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে যথাসাধ্য কাজ করেছিলাম। কিন্তু আমি চলে আসার পর গত ৭/৮ বছরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ভুঁয়া প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। আত্মীয়করণ করার কারণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের সিংহভাগ কাজই বর্তমান কনভ্যেনারের কাছের লোকেরাই পেয়ে থাকে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের উন্নয়ন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে জনগণ প্রকৃত সেবা পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আমি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বক্তব্য জানতে নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ(PCNP) জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। বান্দরবান জেলার সকল উপজেলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কর্মকান্ডের দুর্নীতির খতিয়ানের তালিকা আমরা তৈরি করছি। যা অতিশীঘ্রই জনগণের সামনে প্রকাশ করা হবে। দুর্যোগকালীন সময় এবং বর্তমান সময়েও যদি সেনাবাহিনী পৌরএলাকা ও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পানি পৌঁছে না দিতো তাহলে বান্দরবান হয়ে যেতো সাহারা মরুভূমি।

এ দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। বান্দরবান শহরে বসবাসরত কর্ণেল অলি আহম্মেদ কলেজের প্রফেসর গোলাম মোস্তফা তাজ গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার আইডি থেকে আক্ষেপের সহিত পোস্ট করেন যে, “বান্দরবান পৌরসভায় বসবাসরতগণ ইদানীং প্রচণ্ড পানির সংকটে নিপতিত। এক সপ্তাহে ১ দিন পানি দেয়া হয়। সেবার অমানবিকতা!” গত কয়েকদিন পূর্বে  জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অংচ মং মারমা এক ফেইসবুক স্ট্যাটাসে জানান, সাধারণত ৪ দিন পর পর এক এক এলাকায় পানি সরবরাহ করার কথা। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় এক সপ্তাহ অতিবাহিত হওয়ার পরেও ঠিকমতো পানি পাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু পানি না আসায় সরবরাহ কেন্দ্রে ফোন করলে তাকে পাম্প হাউজে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ দেখানো হয়।

উখিংসাইন নামের স্থানীয় এক উন্নয়নকর্মী ফেইসবুক স্ট্যাটাসে জানান, তার এলাকায় ৩ দিন ধরে পানি নেই। সেখানে শহরের বাসিন্দা আয়শা আফরোজ কাজল, মোঃ ফাহিম, জাফর আলমসহ আরো অনেকে নিজ নিজ এলাকায় ৩ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত পানি সরবরাহ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এছাড়াও নিজেদের ফেইসবুক ওয়ালে পানি সরবরাহের অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আরো অনেক নাগরিক।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারি প্রকৌশলীর সাথে গত ২০মে শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে জানান, ‘লোডশেডিং এবং বারবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার কারণে বিদ্যুতের লাইন ছুটে যাচ্ছে। আমাদের মেশিনে কোন সমস্যা নেই, পিডিবি’র লাইনে সমস্যা। আজকে দুই দিন ধরে পিডিবি চেষ্টা করছে। এখনো কাজ চলছে।’

তবে পিডিবি’র লোকজন পাম্প হাউজে কোনো কাজ করছেনা জানিয়ে পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আমির হোসেন বলেন, পাম্প হাউজের নিজস্ব দু’টি ট্রান্সফর্মারের মধ্যে একটি ট্রান্সফর্মার নষ্ট হয়ে গেছে। গত কয়কদিন আগে সেটা চেক করে উনাদেরকে জানানো হয়েছে। এর পর থেকে উনাদের (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের) কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তি এখন পর্যন্ত আমাদের সাথে যোগাযোগ করেননি। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী উনাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্রান্সফর্মার ঠিকাদার বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানেরই মেরামত করার কথা। পিডিবি’র এখানে কোনো ভূমিকা নেই।

এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আরো বক্তব্য জানতে নির্বাহী প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।