সাগরে জাহাজ চলাচলের সুনির্দিষ্ট নৌপথ চায় কুতুবদিয়ার জেলেরা

এআর আব্বাস সিদ্দিকী, কুতুবদিয়া।। কুতুবদিয়ার অদূরে বঙ্গোপসাগরে জাহাজে কাটা পড়ছে শত শত জেলের জাল ও দড়ি। এতে নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছে শতাধিক জেলে। জেলেদের অভিযোগ, নৌসীমায় সুনির্দিষ্ট নৌপথ না থাকায় নাবিকেরা সুবিধা মতো জাহাজ চালিয়ে জাল-দড়ি কেটে দিচ্ছে।
গত মাসে উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের ইউনুসের মালিকানাধীন এফ বি আল্লাহর দান নামক একটি মাছ ধরার নৌকার সঙ্গে জাহাজের ধাক্কা লেগে নৌকা সাগরে ডুবে যায়। এই ঘটনায় আজিজুল হক নামের এক জেলে তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই সময় অন্য জেলেরা জীবন নিয়ে ফিরলেও নৌকা ও মালামালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্বীপ জুড়ে এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।
দূর্ঘটনা রোধে মহেশখালীর মাতারবাড়ীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো সাগরে জাহাজ চলাচলের জন্য বয়া স্থাপন করে নৌ-সীমা নির্দিষ্ট করার জন্য জেলেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করেছেন।
জেলেদের তথ্যমতে, রাতের অন্ধকারে জাহাজগুলো প্রায় জেলেদের টার্গেট করে জাল-দড়ি কেটে দেয়। কখনো কখনো নৌকায় ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। নাবিকদের অসতর্কতার কারণে ইউনুস, বদিউল আলম, নাছির উদ্দিনসহ অনেকেই সর্বহারা হয়ে পথে বসেছেন। এখন লাখ লাখ টাকার ঋণের বোঝা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এই জেলেরা।
জেলে বদিউল আলম, রফিক উদ্দিন ও শরীফ আহমদসহ অনেকে বলেছেন, “কয়লাবাহী জাহাজ কুতুবদিয়ার তীর ঘেঁষে বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে যায়। এতে দৈনিক মাছ ধরা প্রান্তিক জেলেদের জাল-দড়ি প্রতিনিয়ত নষ্ট হচ্ছে। অথচ জেলেরা তাদের চলাচলের জন্য সুনির্দিষ্ট নৌপথে জাল বসায়নি। তবু নাবিকেরা তাদের সুবিধা মতো জাহাজ চালিয়ে জাল-দড়ি নষ্টসহ নৌকায় ধাক্কা দিয়ে জেলেদের ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। এর ফলে জেলেদের কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে।”
নৌকার মালিক নাছির উদ্দীন বলেন, “নাবিকেরা তাদের নিয়ম অনুযায়ী জাহাজ চালায় না। এলোপাতাড়ি জাহাজ চালিয়ে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকার মাছ ধরার সরঞ্জাম নষ্ট হচ্ছে, ব্যবসার বারোটা বাজছে। আমরা চাই, জাহাজের এই অবাধ চলাচলের জন্য সুনির্দিষ্ট নৌপথে বয়া স্থাপন করা হোক এবং ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করা হোক।”
উপজেলার দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন আল আজাদ বলেন, “কুতুবদিয়ার জেলেরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে জাহাজের ধাক্কায় বহু নৌকা ডুবে গেছে। গত মাসেও একটি নৌকা ডুবে এক জেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও প্রতিদিন জেলেদের জাল-দড়ি নষ্ট হয়। এই সমস্যা দূর করতে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বয়া স্থাপন করে জাহাজ চলাচলের নৌপথ নির্ধারণ করলে দৈনিক মাছ ধরা প্রান্তিক জেলেরা অনেক উপকৃত হবে।” তিনি আরও বলেন, “গত ২০২২ সালে সংশোধিত নৌ অভ্যন্তরীণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী জাহাজের গতিপথ ও পরিবেশসহ নানা নিয়ম মেনে চলাচলের তদারকি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
কুতুবদিয়া উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা মো. নাজমুস সাকিব বলেন, “সাগরে বয়া স্থাপনের মাধ্যমে জাহাজ চলাচলের নৌপথ নির্ধারণ করলে প্রান্তিক জেলেদের অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের ক্ষতিপূরণসহ সাগরে বয়া স্থাপনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।”