গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল!

নিজস্ব প্রতিবেদক।। সম্প্রতি গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জমাকৃত ১৯৪ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে এক গুরুতর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ১১৩, ১৪৬, ১৪৭ ও ১৪৮ নম্বর পৃষ্ঠায় সংবেদনশীল ও বহু আলোচিত “আদিবাসী” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী মহল, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু উপজাতীয় কুচক্রী গোষ্ঠী এবং সমতলের বাম ঘরানার তথাকথিত সুশীল সমাজ, এ শব্দটিকে কেন্দ্র করে দেশবিরোধী রাজনীতি চালিয়ে আসছে। জাতির প্রত্যাশা ছিল সরকারি প্রজ্ঞাপন ও সাংবিধানিক নির্দেশনার আলোকে এ ধরনের শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের পথ চিরতরে বন্ধ করা হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, কমিশনের প্রতিবেদনে আবারও সেই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এটি একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক অস্ত্র। বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সাল থেকেই বারবার স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়ে আসছে—বাংলাদেশে কোনো আদিবাসী নেই। সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে, তারা “ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী/উপজাতি”। এরপরও কিছু মহল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের সাথে যোগ দিয়ে বারবার “আদিবাসী” শব্দটির ব্যবহারকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে। উদ্দেশ্য খুবই পরিষ্কার প্রথমে গণমাধ্যম ও একাডেমিক পরিমণ্ডলে এ শব্দটিকে গ্রহণযোগ্য করা, এরপর সাংবিধানিক স্বীকৃতি আদায়, আর শেষপর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা। এ পরিকল্পনা একেবারেই অমূলক নয়। পূর্ব তিমুর, দক্ষিণ সুদান কিংবা জিবুতির মতো উদাহরণই প্রমাণ করে, আন্তর্জাতিকভাবে “আদিবাসী স্বীকৃতি” কৌশল ব্যবহার করে সেসব অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা হয়েছিল।
ঐতিহাসিক সত্য হলো তারা আদিবাসী নয়, বহিরাগত!! বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীগুলো কোনোভাবেই এ দেশের আদি বাসিন্দা নয়। বরং তারা বহিরাগত ও বিতাড়িত জনগোষ্ঠী। ঐতিহাসিক দলিলপত্রে উল্লেখ আছে, ১৭৩০ সালের দিকে বিভিন্ন যুদ্ধ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বার্মা, ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া উত্তর, থাইল্যান্ড, এবং চীন থেকে তারা এ অঞ্চলে এসে আশ্রয় নেয়। চাকমা ও মারমা পণ্ডিত ও লেখকদের লেখা বহু গ্রন্থেই স্বীকার করা হয়েছে, তাদের আদি নিবাস বার্মা এবং বার্মার চম্পকনগর। এমনকি বান্দরবানের বোমাং রাজার সংলাপসহ বিভিন্ন সময়ে তারা নিজেরাই সংবাদমাধ্যমে স্বীকার করেছে—তারা এ দেশের আদি অধিবাসী নয়। সুতরাং “আদিবাসী” শব্দ প্রয়োগ ইতিহাস বিকৃতির শামিল।
বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদ স্পষ্টভাবে বলছে—দেশে কোনো আদিবাসী নেই, তারা কেবল ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, বিগত প্রায় দুই দশকে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক প্রজ্ঞাপন ও নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যাতে কোনোভাবেই “আদিবাসী” শব্দটি সরকারি নথি বা গণমাধ্যমে ব্যবহার না হয়। অথচ গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের মতো একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনে এ শব্দের ব্যবহার, সরকারের নীতির প্রতি একধরনের অবজ্ঞা এবং দেশের স্বার্থবিরোধী শক্তিকে সুযোগ করে দেওয়ার শামিল।
প্রশ্ন জাগে কিছু ব্যক্তি কেন এত মরিয়া হয়ে “আদিবাসী” স্বীকৃতি চাইছে? এর পেছনে মূলত তিনটি বড় কারণ বিদ্যমান: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাপ সৃষ্টি: আদিবাসী স্বীকৃতি পাওয়া গেলে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতাদের কাছে ভিন্ন মর্যাদা তৈরি হবে। রাজনৈতিক সুবিধা: অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চাপ সৃষ্টি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে “রাষ্ট্রের ভেতরে রাষ্ট্র” গঠনের সুযোগ তৈরি। বিচ্ছিন্নতার পথ প্রশস্ত করা: শেষপর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টাই তাদের সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ জানে, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের নিরলস প্রচেষ্টায় পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু এসব উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতেই ষড়যন্ত্রকারীরা মাঝে মাঝে নতুন কৌশল অবলম্বন করে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে “আদিবাসী” শব্দের ব্যবহারও সেই কৌশলের অংশ। অতএব, এখনই এ বিষয়ে রাষ্ট্রকে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। অবিলম্বে ওই প্রতিবেদনের বিতর্কিত অংশ সংশোধন করতে হবে। দায়িত্বশীল মহলকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক শব্দ ব্যবহার রোধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানে “আদিবাসী” স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদী চক্রান্তকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশের জনগণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে রক্ত দিয়ে অর্জন করেছে এ দেশ। সেই দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো ধরনের আপস বা ছলচাতুরী হতে পারে না। তাই বলা যায়, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে “আদিবাসী” শব্দের ব্যবহার কেবল একটি ভুল নয়, বরং রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল।