ঢাকা | অক্টোবর ৬, ২০২৫ - ৪:৫৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম

যশোর মেডিকেল কলেজে সাপের আতঙ্ক

  • আপডেট: Friday, August 15, 2025 - 8:44 pm

বি এম আসাদ।। সারা দেশে রাসেল ভাইপার সাপের আতঙ্ক যখন স্তমিত। তখন সাপের আতঙ্কে রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলেছে যশোর মেডিকেল কলেজে। যত্রতত্র সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে মেডিকেল কলেজের অন্তরে। অফিস, বাথররুম, পায়খানা কিংবা মেঝেতে প্রতিনিয়ত দেখা মিলছে সাপ। এতে করে মেডিকেল কলেজের শিক্ষক (চিকিৎসক), শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম আতঙ্ক। সর্প আতঙ্কে তারা এখন পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। চলতে ফিরতে চারিদিকে ফেলছেন দেখে শুনে। প্রখ্যাত হরিণার ( হন্যের) বিল থেকে সাপগুলো মেডিকেল কলেজের অত্যাধুনিক ভবনে আশ্রয় নেয়ার কারণে বিষধর এ সাপ আতঙ্কের

সৃষ্টি হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

যশোর মেডিকেল কলেজের ( যমেক) শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা জানিয়েছেন, যশোর মেডিকেল কলেজ ভবনের ভিতর যত্রতত্র বিষধর সাপ ঘুরে বেড়াই। বৃহৎ অত্যাধুনিক এই ভবনের নিচ তলায় মেঝেতে, অফিস, বাথরুম, পায়খানার ভেতর দেখা মেলে সাপের। ইতিমধ্য বেশ কয়েকটি সাপ দেখতে পেয়েছেন তারা। অফিসের তাকে ফাইলপত্র মিলতে তারা সাবধানতা অবলম্বন করেন। কয়েকজন শিক্ষক প্রকৃতির টানে পায়খানায় গিয়ে প্যানের ভিতর একাধিকবার সাপ দেখতে পান।

পরে সংবাদ পেয়ে মানবিক কর্মচারীরা সেখান থেকে সাপ বের করে হন্যের বিলের ভিতরে ছেড়ে দেন। কয়েক দিন পূর্বে মেডিকেল কলেজের প্রবেশ পথের পুরো স্বাস্থ্য বারান্দায় কয়েক ফুট লম্বা বৃহৎ একটি রাসেল ভাইপার সাপ ঘুরে বেড়াতে দেখেন। তখন ওই সাপটি তারা সেখান থেকে ধরে না মেরে বিলের ভিতর ছেড়ে দিয়ে আসেন। মেডিকেল কলেজের ছাত্র এবং ছাত্রী হোস্টেলেও সাপ উঠে। হোস্টেলের সামনেও প্রায় সব দেখা যায়।

মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা প্রহরী মিরাজ হোসেন জানিয়েছেন, মেডিকেল কলেজের চারিদিকে পানি। অন্যের বিলের মধ্যবর্তী স্থানে মাটি ভরাট করে মেডিকেল কলেজ ভবন নির্মাণ করা হয়। এমনকি মেডিকেল কলেজের ক্যাম্পাসের ভিতরেও বৃহৎ জলাশয়। সেখানে পট,কচুরিপানা ভরা। চারিপাশে বিলের পানি। বর্ষা মৌসুমে বিলে পানি বেড়ে যায়। ওই পানি থেকে সাপগুলো ডাঙ্গায় উঠে যায়। দক্ষিণ অঞ্চলের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ অত্যাধুনিক ভবন হচ্ছে যশোর মেডিকেল কলেজ। ভবনের চারিপাশে ড্রেন। নিচু স্থান হতে ডি এন এর ভিতর সাপ আসে। এরপর সাপ ভবনের মধ্যে প্রবেশ করে। কয়েকদিন আগে একটি বিষধর সাপ মেডিকেল কলেজের বারান্দায় মেঝেতে ঘুরে বেড়াত থাকে। তখন ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিলে তারা ওই সাপটি মেডিকেল কলেজ থেকে নিয়ে আসেন এবং অন্যত্র স্থানান্তর করেন। কর্মচারী মিরাজ হোসেন এসময় সাপটির ছবি তার মোবাইলে ক্যামেরাবন্দি করেন। ওইসব সাপটির ছবি প্রদর্শন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সাপের ভয়ে রাতদিন চলাফেরা করতে ভয় পাচ্ছেন। এমনকি রাতে তাদের ঘুম আসেনা সাপের আতঙ্কে।

কর্মচারীরা জানিয়েছেন, শুধু রাসেল ভাইপার সাপ না। কালাচে সাপসহ বিভিন্ন ধরনের সাপ দেখাই যায় সেখানে।

কলেজের অধ্যক্ষের পি এস মোঃ আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, সাপের ভয়ে তারা ভীত। অফিস করার সময় সাপের আতঙ্ক তাদের মাঝে কাজ করে। যেখানে সেখানে সাপ দেখা যায়।অফিসের তাকিয়ে থাকা ফাইলপত্র সতর্কতার সাথে উঠানামা করাতে হয় সাপের ভয়ে।

অন্যান্য কর্মচারীরাও একই কথা বলেন। কলেজের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত বলে তারা উল্লেখ করেন।

মারিয়া নামে এক ইন্টার্ন চিকিৎসক চিকিৎসক বলেন, দিনের বেলা রাতের বেলা তাদের হোস্টেলের সামনে বড় সাপ ঘুরে বেড়ায়। বিল্ডিং সম্প্রসারণে যে কাজ চলছে। সেখানেও দেখা যায় সাপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। সাপের ভয়ে তারা বিপদে আছেন উল্লেখ করে বলেন, হোস্টেল থেকে কলেজে যাওয়ার সময় মাত্র ৫০ ফিট দৈর্ঘ্য রাস্তায় চলতে গেলেও সাপের ভয়ে পা ফেলতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এ ভয়ানক পরিস্থিতি অব্যাহত রয়েছে যশোর মেডিকেল কলেজে।

এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, প্রফেসর ডা. এএইচএম আহসান হাবিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার কলেজ ভবনে প্রতিনিয়ত সব দেখা যাচ্ছে। সাপ গুলো বিষধর। সেদিন একটি সাপ ভবনের নিচতলায় মেঝেতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কর্মচারীরা ছবিও তুলে রেখেছে। সেটি ছিল রাসেল ভাইপার সাপ বলে উল্লেখ করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. এ এইচ এম আহসান হাবিব। কলেজের কলেজের শিক্ষক সমিতির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমদ ফেরদৌস জাহাঙ্গীর সুমন একই কথা বলেছেন।

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, হন্যের বিল প্রাচিন আমল থেকেই বিখ্যাত। এক সময় এখানে প্রচুর সংখ্যক সাপ থাকতো। কালের বিবর্তনে এখন সাপের সংখ্যা ঘুমিয়ে গেছে। তবে নিঃশেষ হয়ে যায়নি। বিলের বিভিন্ন স্থানে গর্তের ভিতর এখনো অনেক সাপ দেখা যায় বলে জানিয়েছেন তারা। গত বছর সারাদেশে এ রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এ বছর রাসেল ভাইপার সাপের উপদ্রব আলোড়ন সৃষ্টি না করলেও যশোর মেডিকেল কলেজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এ রাসেল ভাইপার সাপ।